মোঃ নুর হোসাইন :
নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য দম্পতি মোহাম্মদ আলী ও আয়েশা ফেরদাউস এবং তাদের ছেলে আশীক আলীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১২ আগ্ট) দুপুরের দিকে থানা-পুলিশ তাদেরর ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে নথিপত্র হাতিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থাপন করা হলে শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে নথিপত্র উপস্থাপনের আগেই সকালে মোহাম্মদ আলী, তার স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশীক আলীকে পুলিশ ও নৌবাহিনীর একটি বিশেষ দল হাতিয়া থেকে জেলা সদরে নিয়ে আসে। তাদের সেনাবাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তায় সুধারাম থানায় রাখা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। নোয়াখালী জজ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, হাতিয়ার সাবেক দুই সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী ও আয়েশা ফেরদাউস এবং তাদের ছেলে আশীক আলীকে আজ হাতিয়ার আদালতে উপস্থাপন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে তাদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। পরিদর্শক শাহ আলম আরও বলেন, আটক দুই সাবেক সংসদ সদস্য ও তাদের ছেলের জন্য আদালতে জামিন আবেদন করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার দিবাগত রাত আনুমানিক তিনটার দিকে নৌবাহিনীর হাতিয়া ক্যাম্প কমান্ডারের নেতৃত্বে এক দল নৌ সেনা হাতিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর কৈলাস এলাকার বাড়ি থেকে আটক করেন। এরপর আজ সোমবার সকালে তাদেরর হাতিয়া থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। এ বছর ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৬ হাতিয়া আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ আলীক। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন। এর আগে দুই মেয়াদে হাতিয়ার সংসদ সদস্য ছিলেন মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস।
এছাড়া বিগত উপজেলা নির্বাচনে ছোটভাই মাহবুব মোর্শেদ লিটনকে বাদ দিয়ে ছেলে আশিক আলীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন মোহাম্মদ আলী।
সম্প্রতিবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও গণমাধ্যমে মোহাম্মদ আলীর নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া মোহাম্মদ আলীর কাছে হাতিয়ার প্রায় সাত লাখ মানুষ জিম্মি হয়ে আছেন বলেও উল্লেখ করেন। এছাড়া স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মোহাম্মদ আলীর গ্রেফতারের দাবিতে মিছিল করেন।
জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী আগে জাতীয়তাবাদী যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এরপর জাতীয় পার্টিতে। তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমর্থন নিয়ে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে তিনি জাতীয় পার্টির সমর্থনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করে হেরে যান তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মাহমুদুর রহমান বেলায়েতের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেও ঋণখেলাপি হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল হলে তার স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস স্বতন্ত্র নির্বাচন করে হেরে যান। আয়েশা ফেরদাউস ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। পরে গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন মোহাম্মদ আলী ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবার ছিলেন হাতিয়ার সম্রাট পরিবারের মতো। মোহাম্মদ আলীর পরিবার হাতিয়ার মানুষকে জিম্মি করে তাদের সব ধরনের অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদেরকে শাসনের নামে কার্যত শোষণ করছিলেন। কেউ কেউ দাবী করছেন মোহাম্মদ আলী একজন জলদস্যু এবং ডাকাত ছিলেন পরে সংসদ সদস্য হন কিন্তু হাতিয়ার জলদস্যু, বালু উত্তোলন সহ সব অবৈধ কারবার চলতো তার হাতের ইশারার। মাছের আড়ৎ এবং স্প্রিট বোর্ড, সি ট্র্যাকে চাঁদাবাজি হতো তার কথায়। তাদের দাবী মোহাম্মদ আলীর নির্দেশে হাতিয়ায় অনেক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। মোহাম্মদ আলীর আটকের খবর শুনার পর হাতিয়ার মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইতে দেখা গেছে৷ কেউ কেউ মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস করছেন। এছাড়াও অনেক মানুষকে দেখা গেছে মোহাম্মদ আলীর ফাঁসির দাবিতে শ্লোগান তুলে বিক্ষোভ করছেন।
নোবিপ্রবি মেধাবী শিক্ষার্থী ও হাতিয়ার কৃতি সন্তান নাজিউর রহমান বলেন, মোহাম্মদ আলী হাতিয়ার মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিলো, তার আটকে আমরা হাতিয়ার মানুষ খুশি। আমরা সাধারণ হাতিয়াবাসী তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং তার ও তার পরিবারের অবৈধ সকল সম্পদ জব্দের দাবী জানাই।
সম্পাদক ও প্রকাশক : এডভোকেট সালাহ উদ্দিন মাহমুদ মাসুম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : অহিদ উদ্দিন মাহমুদ মুকুল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : জান্নাতুল ফেরদৌস প্রিয়া