স্টাফ রির্পোটার-
নৌকায় ভোট দিলে ভোটারদের পিষে ফেলার ঘোষণা দেওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ এবার উল্টো উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশীদ কিরনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে বেগমগঞ্জের নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি, আক্তার হোসেন ফয়সল, মিনহাজ আহমেদ জাবেদ, এমএ কাশেমসহ অনেকে নোয়াখালী -৩ বেগমগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করি। দলীয় সভানেত্রীর মনোনয়ন বোর্ড মামুনুর রশিদ কিরন সাহেবকে মনোনয়ন দেন। পরবর্তীতে সভানেত্রী সারাদেশব্যাপী মনোনয়ন প্রত্যাশিদেরকে গণভবনে ডেকে নেন। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে মনোনয়ন বিষয়ে বলেন, ২৯৮ আসনে তিনি মনোনয়ন দিয়েছেন কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা ছিল জাতীয় নির্বাচনকে অর্থবহ, প্রতিযোগিতামূলক ও আনন্দ মুখর করার জন্য যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। এতে দলের কোনো আপত্তি থাকিবে না।
তিনি আরও বলেন, বিগত নির্বাচনের মতো বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় কেউ নির্বাচিত না হওয়ার জন্য হুঁশিয়ার করা হয়েছে। কারণ এতে দেশে এবং বিদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সে অনুযায়ী দলীয় সভানেত্রীর পরামর্শ মোতাবেক আমরা তিন জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনহাজ আহমেদ জাবেদ সাহেবকে সমর্থন করেছি। এতে দলের গঠনতন্ত্র বিরোধী কোনো কাজ আমরা করেনি এবং সভানেত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করছি।
নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর আমরা কখনও দল ও দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে কোনো বিষাদগারও করিনি। উপরন্তু আমরা দল ও প্রতীকের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছি। সাধারণ ভোটারদের অভিব্যক্তি অনুযায়ী আমরা নৌকার প্রার্থীর যোগ্যতা ও বিগত দশ বছরের উনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু সর্বত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছি।
মামুনুর রশীদ কিরন নানা অপকর্ম করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মামুনুর রশীদ কিরন ২০০৮ সালে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়ে নৌকাকে ডুবিয়েছে এবং কৌশলে বিএনপির প্রার্থী বরকত উল্যাহ বুলুকে জয়ী হতে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। ২০২১ সালে দলীয় প্রধান কর্তৃক মনোনীত চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সালের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী করে উনার ভাই অযোগ্য প্রার্থী সাইফুল্ল্যাহকে মেয়র বানান। বর্তমানে মেয়র সাইফুল্ল্যাহ পৌরসভায়, ঘুষ, দুর্নীতি এবং নিয়োগ বাণিজ্যের আখড়ায় পরিণত করেছেন। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রায় ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করিয়ে নৌকার ভরাডুবি করেন। উপজেলার সকল টেন্ডার উনি উনার পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে কমিশনের ভিত্তিতে বণ্টন করেন। যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে উনার বিরুদ্ধে বিরূপ জনমত তৈরি হয়।
তিনি আরও বলেন, চৌমুহনী হকার্স মার্কেটের সভাপতির বিরুদ্ধে মন্দির ভাঙার মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাকে গ্রেপ্তার করিয়ে মামুনুর রশীদ নিজে সভাপতি হয়ে মার্কেটের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেন। সর্বশেষ বিখ্যাত চৌমুহনী বড় মসজিদের সভাপতি হয়ে এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা সামছুল হক সামসুকে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক করে উনিসহ মসজিদের তহবিল থেকে ৩ কোটি বিশ লাখ টাকা তছরুপ করলে মুসল্লিদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। যা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন আলেম ওলামাগণ সেই ঘটনার বিরুদ্ধে ওয়াজে বিষেদাগার করেন। এতে করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মারাত্মক বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে বিষয়টি মেনে নিতে পারি না।
আওয়ামী লীগকে কলঙ্ক মুক্ত করতে চাই উল্লেখ করে এবিএম জাফর উল্যাহ বলেন, আমরা আওয়ামী লীগকে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য মসজিদের টাকা তছরূপের দায়ে গতকাল উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ কিরন এবং সহ-সভাপতি সামসুল হক সামসুকে উপজেলা আওয়ামী লীগে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম এবং স্থায়ী বহিষ্কারসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা আওয়ামী লীগ ও দলীয় সভানেত্রী বরাবর অনুলিপি প্রেরণ করলাম।
১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ