স্টাফ রিপোর্টার-
ভাগ্য বদলের আশায় ৩ মাস আগে দুবাই পাড়ি জমিয়েছিলেন মো. রাকিব উদ্দিন (২১)। কয়েক দিন আগেই কোম্পানির চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তার।
বুক ভরা আশা নিয়ে বিদেশ পাড়ি দেওয়া রাকিব বাড়ি ফিরেছেন কফিনবন্দি হয়ে। অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় দিলেন সবাই। শুক্রবার (১০ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাতিয়া উপজেলার নিজ বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।
মো. রাকিব উদ্দিন হাতিয়া উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ চরইশ্বর রায় হোতারাগো বাড়ি মো. জামাল উদ্দিনের ছেলে।
জানা যায়, চার ভাই এক বোনের মধ্যে রাকিব উদ্দিন চতুর্থ। দ্বীপ সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ৩ মাস আগে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় দুবাই পাড়ি জমান। একটি কোম্পানিতে চাকরি নেন শ্রমিকের। গত ১৮ এপ্রিল কর্মক্ষেত্রে লিফট দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন রাকিব। ৯ দিন আইসিইউতে ছিলেন। সবশেষ ২৬ এপ্রিল আইসিউতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
শুক্রবার (১০ মে) সন্ধ্যায় রাকিবের মরদেহ নিজ বাড়িতে আসলে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জানাজা শেষে ওমর মুন্সী মসজিদের পাশের পারিবারিক কবরস্থানে দাদার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
রাকিবের বড় ভাই ইরাক উদ্দিন বলেন, আমার ভাই কাজে গিয়ে লিফট দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়। তারপর তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়। ৯ দিন পর সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। আমাদের সংসার এলোমেলো হয়ে গেলো। ভাইকে হারিয়ে আমরা সবাই দিশেহারা অবস্থায় আছি।
রাকিবের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, আমার বড় ছেলে প্রতিবন্ধী। রাকিব পড়াশোনা রেখে পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করতে প্রবাসে পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু তিন মাসের মাথায় আজ সে কফিনবন্দি হয়ে ফিরেছে। তার মা রেজিয়া বেগম বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। আমিও ছেলেকে হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে আছি।
জানাজায় অংশ নেওয়া হাতিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদ উদ্দিন বলেন, রাকিব খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। তার মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত।
হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহবুব মোর্শেদ লিটন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, হাতিয়ার অনেকেই বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। যারা ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিদেশ গমন করেছেন। ঠিক রাকিব উদ্দিন ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য দুবাই গিয়ে তিন মাসের মধ্যে কফিনবন্দি হয়ে ফিরলেন। সংসারের হাল ধরতে সে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে। তবে ভাগ্য তার সহায় হয়নি। তাকে অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় দিয়েছে সবাই।