১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পালক সন্তানের বিরুদ্ধে দানকৃত সম্পত্তি বিক্রির অভিযোগ, এলাকাবাসী নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ালেন বৃদ্ধা মা

  • আপডেট: ০৪:১২:৫৩ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ১২৯২

নুর হোসাইন :

স্বামী নেই দীর্ঘ ৩০ বছর। একমাত্র পালক মেয়েকে দিয়েছেন বিয়ে। স্বামীর শেষ ইচ্ছায় নিজের সম্পত্তি দান করেছেন মাদরাসা মসজিদে। কিন্তু পালক মেয়ে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে মায়ের দানকৃত সম্পত্তি বিক্রি করছেন মানুষের কাছে। নিরুপায় হয়ে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ালেন বৃদ্ধা লুৎফুন নাহার (৮৫)। চোখে পানি আর মুখে আর্তনাদের বুলি। স্বামীর দেওয়া দানকৃত সম্পত্তি যেনো দানই হয় এটাই আকুতি। শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বেগমগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ শরীফপুর গ্রামের লুৎফুন নাহার মহিলা মাদরাসা প্রাঙ্গণে রাস্তায় দাঁড়ান তিনি। এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা, মাদরাসার শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন মানববন্ধনে।

জানা যায়, লুৎফুন নাহারের স্বামী মৌলভী সৈয়দ আহমেদ প্রায় ৩০ বছর আগে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে সকল সম্পত্তি মৌলভী সৈয়দ আহমেদ তার স্ত্রী লুৎফুন নাহারের নামে লিখে দেন। যার পরিমাণ ছিল প্রায় দুই একর। লুৎফুন নাহার তার পালক মেয়ে শামসুন নাহার ওরফে আলেয়া বেগমকে পাশ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা নাসির উদ্দিনের সাথে বিয়ে দেন। স্বামীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী লুৎফুন নাহার তার কিছু সম্পত্তি মাদরাসা মসজিদে দান করেন এবং কিছু সম্পত্তি বর্গা দিয়ে মাদরাসা পরিচালনা ও নিজের খরচ চালাতেন। ২০১৫ সালের ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে পালক মেয়ে তার স্বামী নাসির উদ্দিনের মাধ্যমে প্রায় এক একর জায়গা বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করেন। নিরুপায় হয়ে বৃদ্ধা লুৎফুন নাহার পালক সন্তানের বিরুদ্ধে সম্পত্তি বিক্রির অভিযোগ তুলে এলাকাবাসী নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ান।

বৃদ্ধা লুৎফুন নাহার বলেন, আমার স্বামী আমার নামে সম্পত্তি দিয়ে গেছেন। আমাদের কোনো ছেলে মেয়ে নাই। একটা পালক মেয়ে ছিল। আমার স্বামী মরে যাওয়ার আগে বলে গেছে তার সম্পত্তি যেনো মাদরাসা মসজিদ নির্মাণ করি। আমি সব দান করেছি। সেখানে দুইটা মাদরাসা স্থাপন করেছি। আমার পালক মেয়ে তার স্বামীসহ আমাকে মারধর করে ভয় দেখিয়ে জমি বিক্রির সাক্ষর নিতে চেয়েছিল। আমি পালিয়ে তার বাড়ি থেকে চলে এসেছি। বৃদ্ধা লুৎফুন নাহার আরও বলেন, আমাকে নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ দিয়ে আমাকে ভয় দেখানো হচ্ছে। আমার নিরাপত্তা চাই। আমার দানকৃত সম্পত্তি যেনো দান হয় সেটা চাই। আমার দানকৃত সম্পত্তি যেনো কবুল হয়। আমি তা চাই। আপনারা সহযোগিতা করেন তাহলে আল্লাহর কাছে সওয়াব পাবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম বলেন, এই মহিলা লুৎফুন নাহার নিঃসন্তান। একটা পালক মেয়ে আছে। সেই পালক মেয়ে তার স্বামীসহ এসব সম্পত্তি জবর দখল করে কম দামে বিক্রি করছে। আমরা এলাকাবাসী এটার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ বিচার চাই। সাবেক ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পালক মেয়ের জামাই একটা ভূয়া দলিল সৃষ্টি করেছে।একটা প্রভাবশালী পক্ষের সহযোগিতায় জোরপূর্বক ভাবে এসব দানকৃত জমি দখলের চেষ্টা করছে। এটা নিয়ে মানুষদেরকে হয়রানি করছে। আমরা এটার প্রতিবাদ জানাই এবং সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ বিষয়ে পালক মেয়ে শামসুন নাহার বলেন, আমার মা লুৎফুন নাহার যেসব অভিযোগ করেছেন সব মিথ্যা।  তিনি ২০১৫ সালে সকল সম্পত্তি আমাকে দান করেছেন। আমি সেখান থেকে বিক্রি করছি। কোথাও কোনো অসুবিধা নাই। আমার কাছে সকল প্রমাণ আছে। আমি আমার মাকে কখনো মারধর করিনি। এবিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিনুল হাসান বলেন, আমি বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জেনেছি। বৃদ্ধা মহিলা যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা খোঁজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

 

সর্বাধিক পঠিত

নোবিপ্রবি ছাত্রী হলে অগ্নিকাণ্ড, পরীক্ষা স্থগিত

পালক সন্তানের বিরুদ্ধে দানকৃত সম্পত্তি বিক্রির অভিযোগ, এলাকাবাসী নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ালেন বৃদ্ধা মা

আপডেট: ০৪:১২:৫৩ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩

নুর হোসাইন :

স্বামী নেই দীর্ঘ ৩০ বছর। একমাত্র পালক মেয়েকে দিয়েছেন বিয়ে। স্বামীর শেষ ইচ্ছায় নিজের সম্পত্তি দান করেছেন মাদরাসা মসজিদে। কিন্তু পালক মেয়ে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে মায়ের দানকৃত সম্পত্তি বিক্রি করছেন মানুষের কাছে। নিরুপায় হয়ে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ালেন বৃদ্ধা লুৎফুন নাহার (৮৫)। চোখে পানি আর মুখে আর্তনাদের বুলি। স্বামীর দেওয়া দানকৃত সম্পত্তি যেনো দানই হয় এটাই আকুতি। শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বেগমগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ শরীফপুর গ্রামের লুৎফুন নাহার মহিলা মাদরাসা প্রাঙ্গণে রাস্তায় দাঁড়ান তিনি। এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা, মাদরাসার শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন মানববন্ধনে।

জানা যায়, লুৎফুন নাহারের স্বামী মৌলভী সৈয়দ আহমেদ প্রায় ৩০ বছর আগে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে সকল সম্পত্তি মৌলভী সৈয়দ আহমেদ তার স্ত্রী লুৎফুন নাহারের নামে লিখে দেন। যার পরিমাণ ছিল প্রায় দুই একর। লুৎফুন নাহার তার পালক মেয়ে শামসুন নাহার ওরফে আলেয়া বেগমকে পাশ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা নাসির উদ্দিনের সাথে বিয়ে দেন। স্বামীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী লুৎফুন নাহার তার কিছু সম্পত্তি মাদরাসা মসজিদে দান করেন এবং কিছু সম্পত্তি বর্গা দিয়ে মাদরাসা পরিচালনা ও নিজের খরচ চালাতেন। ২০১৫ সালের ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে পালক মেয়ে তার স্বামী নাসির উদ্দিনের মাধ্যমে প্রায় এক একর জায়গা বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করেন। নিরুপায় হয়ে বৃদ্ধা লুৎফুন নাহার পালক সন্তানের বিরুদ্ধে সম্পত্তি বিক্রির অভিযোগ তুলে এলাকাবাসী নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ান।

বৃদ্ধা লুৎফুন নাহার বলেন, আমার স্বামী আমার নামে সম্পত্তি দিয়ে গেছেন। আমাদের কোনো ছেলে মেয়ে নাই। একটা পালক মেয়ে ছিল। আমার স্বামী মরে যাওয়ার আগে বলে গেছে তার সম্পত্তি যেনো মাদরাসা মসজিদ নির্মাণ করি। আমি সব দান করেছি। সেখানে দুইটা মাদরাসা স্থাপন করেছি। আমার পালক মেয়ে তার স্বামীসহ আমাকে মারধর করে ভয় দেখিয়ে জমি বিক্রির সাক্ষর নিতে চেয়েছিল। আমি পালিয়ে তার বাড়ি থেকে চলে এসেছি। বৃদ্ধা লুৎফুন নাহার আরও বলেন, আমাকে নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ দিয়ে আমাকে ভয় দেখানো হচ্ছে। আমার নিরাপত্তা চাই। আমার দানকৃত সম্পত্তি যেনো দান হয় সেটা চাই। আমার দানকৃত সম্পত্তি যেনো কবুল হয়। আমি তা চাই। আপনারা সহযোগিতা করেন তাহলে আল্লাহর কাছে সওয়াব পাবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম বলেন, এই মহিলা লুৎফুন নাহার নিঃসন্তান। একটা পালক মেয়ে আছে। সেই পালক মেয়ে তার স্বামীসহ এসব সম্পত্তি জবর দখল করে কম দামে বিক্রি করছে। আমরা এলাকাবাসী এটার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ বিচার চাই। সাবেক ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পালক মেয়ের জামাই একটা ভূয়া দলিল সৃষ্টি করেছে।একটা প্রভাবশালী পক্ষের সহযোগিতায় জোরপূর্বক ভাবে এসব দানকৃত জমি দখলের চেষ্টা করছে। এটা নিয়ে মানুষদেরকে হয়রানি করছে। আমরা এটার প্রতিবাদ জানাই এবং সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ বিষয়ে পালক মেয়ে শামসুন নাহার বলেন, আমার মা লুৎফুন নাহার যেসব অভিযোগ করেছেন সব মিথ্যা।  তিনি ২০১৫ সালে সকল সম্পত্তি আমাকে দান করেছেন। আমি সেখান থেকে বিক্রি করছি। কোথাও কোনো অসুবিধা নাই। আমার কাছে সকল প্রমাণ আছে। আমি আমার মাকে কখনো মারধর করিনি। এবিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিনুল হাসান বলেন, আমি বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জেনেছি। বৃদ্ধা মহিলা যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা খোঁজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।