১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোয়াখালীতে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আওয়ামী লীগের ১৫ নেতাকে অব্যাহতি

  • আপডেট: ০১:০৫:০২ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৩ জানুয়ারি ২০২৪
  • ১৮৮৮

স্টাফ রিপোর্টার-
নৌকায় ভোট দিলে ভোটারদের পিষে ফেলার হুমকি দেওয়া বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এবিএম জাফর উল্যাহকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আরও ১৪ জন নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারী) রাত ৮টার দিকে বেগমগঞ্জ বিসিক শিল্প এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশীদ কিরণ।
অব্যাহতি পাওয়া নেতারা হলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এ বি এম জাফর উল্যাহ, সহ-সভাপতি মাহফুজুল হক বেলাল, সামসুল হক সামসু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন আজীম, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোরশেদ আলম, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ইমাম হোসেন রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক শরাফ উদ্দিন বাবু, সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এড এ বি এম ইউসুফ আশিক, সদস্য ও চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সল, সদস্য শাহজাহান সাজু, হায়দার জাফর হাবিব, মেহেদি হাসান টিপু ও দাউদ উল্যা হিল মজিদ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশীদ কিরণ। তিনি বলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ নৌকাতে যারা ভোট দিবেন তাদের ছেঁচি (পিষে) ফেলে দেওয়ার কথা বলেছেন। এছাড়াও এলাকা ছাড়ার কথা বলেছেন। আমরা তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থন করে বলে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। সমস্যা হলো যারা আওয়ামী লীগের পদধারী তারা কখনো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না। কেননা নৌকা মানে স্বাধীনতার প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক। যারা নৌকার বিপক্ষে আমরা তাদের বিপক্ষে।
মামুনুর রশীদ কিরণ আরও বলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা ১৫ জন নৌকার বিপক্ষে অবস্থানকারী নেতাকে অব্যহতি দিয়েছি এবং তাদের বহিষ্কারের জন্য জেলা আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রে সুপারিশ করেছি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এ বি এম জাফর উল্যাহ ও চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সল। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সহ-সভাপতি শামসুল হককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নৌকার ভোটারদের বিপক্ষে বক্তব্য দেওয়ার কারনে আচরণ বিধি লঙ্ঘন হয়েছে। আমরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ জমা দিবো।
গত ১জানুয়ারি (সোমবার) বিকেলে কাদিরপুর ইউনিয়নে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের মিনহাজ আহমেদ জাবেদের এক উঠান বৈঠকে, নৌকায় ভোট দিলে ভোটারদের পিষে ফেলার হুমকি দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ।
তার সেই বক্তব্যের ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আজকে কাদিরপুর ইউনিয়নের গণসংযোগের শেষ দিন। সমাপনী দিনে আপনাদের বলছি কাদিরপুরের একটা লোক যদি ডান বাম করেন তাদের খেদাই (তাড়িয়ে) দেবেন। যেগুলো নৌকায় ভোট দেবে মনে করবেন তাদের কাদিরপুর থাকার অধিকার নাই। তাড়িয়ে দেবেন এখান থেকে। দুই একটা কালসাপ আছে। এদের চিহ্নিত করে নির্বাচনের দিন চেঁচি (পিষে) দেবেন।’
এসময় স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের মিনহাজ আহমেদ জাবেদ, চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সাল অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ এফসিএ, কাদিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, দলের কার্যক্রমে অনুপস্থিত, গঠনতন্ত্র পরিপন্থি ও অনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত থাকায় ১১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতি প্রাপ্ত নেতারা কোন প্রার্থীর ভোট করে তা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়।
অব্যাহতির প্রতিক্রিয়া জানতে ডা. এবিএম জাফর উল্যাহর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত আক্তার হোসেন ফয়সল গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের বিষয়ে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন। দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বা দলীয় কর্মীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নির্দেশনাও নেই। আমরা শেখ হাসিনার কর্মী। প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা সে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। আমি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি। উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনোভাবেই আমাকে অব্যহতি দিতে পারেন না।

সর্বাধিক পঠিত

নোবিপ্রবি ছাত্রী হলে অগ্নিকাণ্ড, পরীক্ষা স্থগিত

নোয়াখালীতে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আওয়ামী লীগের ১৫ নেতাকে অব্যাহতি

আপডেট: ০১:০৫:০২ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৩ জানুয়ারি ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার-
নৌকায় ভোট দিলে ভোটারদের পিষে ফেলার হুমকি দেওয়া বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এবিএম জাফর উল্যাহকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আরও ১৪ জন নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারী) রাত ৮টার দিকে বেগমগঞ্জ বিসিক শিল্প এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশীদ কিরণ।
অব্যাহতি পাওয়া নেতারা হলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এ বি এম জাফর উল্যাহ, সহ-সভাপতি মাহফুজুল হক বেলাল, সামসুল হক সামসু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন আজীম, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোরশেদ আলম, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ইমাম হোসেন রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক শরাফ উদ্দিন বাবু, সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এড এ বি এম ইউসুফ আশিক, সদস্য ও চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সল, সদস্য শাহজাহান সাজু, হায়দার জাফর হাবিব, মেহেদি হাসান টিপু ও দাউদ উল্যা হিল মজিদ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশীদ কিরণ। তিনি বলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ নৌকাতে যারা ভোট দিবেন তাদের ছেঁচি (পিষে) ফেলে দেওয়ার কথা বলেছেন। এছাড়াও এলাকা ছাড়ার কথা বলেছেন। আমরা তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থন করে বলে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। সমস্যা হলো যারা আওয়ামী লীগের পদধারী তারা কখনো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না। কেননা নৌকা মানে স্বাধীনতার প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক। যারা নৌকার বিপক্ষে আমরা তাদের বিপক্ষে।
মামুনুর রশীদ কিরণ আরও বলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা ১৫ জন নৌকার বিপক্ষে অবস্থানকারী নেতাকে অব্যহতি দিয়েছি এবং তাদের বহিষ্কারের জন্য জেলা আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রে সুপারিশ করেছি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এ বি এম জাফর উল্যাহ ও চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সল। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সহ-সভাপতি শামসুল হককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নৌকার ভোটারদের বিপক্ষে বক্তব্য দেওয়ার কারনে আচরণ বিধি লঙ্ঘন হয়েছে। আমরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ জমা দিবো।
গত ১জানুয়ারি (সোমবার) বিকেলে কাদিরপুর ইউনিয়নে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের মিনহাজ আহমেদ জাবেদের এক উঠান বৈঠকে, নৌকায় ভোট দিলে ভোটারদের পিষে ফেলার হুমকি দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ।
তার সেই বক্তব্যের ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আজকে কাদিরপুর ইউনিয়নের গণসংযোগের শেষ দিন। সমাপনী দিনে আপনাদের বলছি কাদিরপুরের একটা লোক যদি ডান বাম করেন তাদের খেদাই (তাড়িয়ে) দেবেন। যেগুলো নৌকায় ভোট দেবে মনে করবেন তাদের কাদিরপুর থাকার অধিকার নাই। তাড়িয়ে দেবেন এখান থেকে। দুই একটা কালসাপ আছে। এদের চিহ্নিত করে নির্বাচনের দিন চেঁচি (পিষে) দেবেন।’
এসময় স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের মিনহাজ আহমেদ জাবেদ, চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সাল অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ এফসিএ, কাদিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, দলের কার্যক্রমে অনুপস্থিত, গঠনতন্ত্র পরিপন্থি ও অনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত থাকায় ১১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতি প্রাপ্ত নেতারা কোন প্রার্থীর ভোট করে তা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়।
অব্যাহতির প্রতিক্রিয়া জানতে ডা. এবিএম জাফর উল্যাহর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত আক্তার হোসেন ফয়সল গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের বিষয়ে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন। দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বা দলীয় কর্মীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নির্দেশনাও নেই। আমরা শেখ হাসিনার কর্মী। প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা সে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। আমি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি। উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনোভাবেই আমাকে অব্যহতি দিতে পারেন না।