১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চৌমুহনীতে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবসা, প্রধান সড়কে অবৈধ সিএনজি স্টেশান: অতিষ্ট নাগরিক জীবন

স্টাফ রিপোর্টার-
ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে রেখেছে হকার এবং সকল ধরনের ছোট খাটো কাচা বাজারের ব্যবসায়ীরা। আবার অন্যদিকে প্রধান সড়কের উপর অন্যায় ভাবে সিএনজির স্ট্যান্ড তৈরি করে যানযট সৃষ্টি করে রেখেছে একটি মহল। ঈদে মার্কেট করার জন্য আসা সকল ক্রেতাকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যস্ততম বানিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ চৌমুহনী বাজার হচ্ছে জেলাটির প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র, এই শহরে রাতদিন ২৪ ঘন্টায় হাজার হাজার ক্রেতা ও বিক্রেতার সমাগম ঘটে এই বাজারে। শুধু তাই নয় জেলার প্রতিটি জেলা-উপজেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামের বাজার গুলোর আমদানি রপ্তানি হয় এই চৌমুহনীর সাথে, সব ধরনের মালামাল এইখান থেকে পাইকারি নিয়ে ব্যবসা করেন তারা।

বেদখল হয়ে আছে চৌমুহনী বাজারের বেশিরভাগ ফুটপাত। ফুটপাতে পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন ভাসমান ব্যবসায়ীরা।ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কের অনেকাংশও তাদের দখলে। ফলে পথচারীদের হাঁটা চলারও সুযোগ নেই।এছাড়া পুরো বাজার জুড়ে লেগে থাকছে ভয়াবহ যানজট। হকারদের উপদ্রব আর যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং যানজট আরও বাড়িয়ে তুলছে।

হকার আর যানজট এই দুটিই এখন হয়ে উঠেছে বেগমগঞ্জ বাসীর প্রধান যন্ত্রণা। এই দুই যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না কিছুতেই। বরং দিন দিন যন্ত্রণা আরও তীব্র হচ্ছে। মাঝে মাঝে ফুটপাত হকারদের দখল থেকে মুক্ত করতে ও অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড উচ্ছেদে কিছু তৎপরতা চালানো হয়। তবে এতে খুব একটা সফলতা মেলে না।

ক্যামেরার সামনে আসতে না চাওয়া বেশ কয়েকজন পথচারী অভিযোগ করে বলেন, পথচারীদের হাটার যায়গা হচ্ছে ফুটপাত, আবার কিছু কাচা বাজার ব্যবসায়ী ও হকার রাস্তার মাঝখানে এসে দোকান পাট বসিয়ে দেয়। আর সেটাই দখল করে বিভিন্ন প্রকার ব্যবসা করতেছেন এই ব্যবসায়িরা, আর এদেরকে পরিচালনা করেন ক্ষমতাসিন কিছু লোকজন, এবং প্রতিদিন একটি চক্র প্রতিটি দোকান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে চাঁদা আদায় করে। এই অন্যায় ভাবে রাস্তা দখল করে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। আবার এই শহর দিয়ে নোয়াখালীর দক্ষিণ অঞ্চল, লক্ষ্মীপুর সহ চাঁদপুরের কয়েক হাজার গাড়ি দৈনিক ঢাকা চট্টগ্রাম যাতায়াত করে থাকে, কিন্তু এই শহরটির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কটির প্রস্ত কম থাকায় সব সময় জ্যাম লেগেই থাকে, তার উপর বিভিন্ন ধরনের মালের গাড়ি গুলো দাঁড় করিয়ে লোড আনলোড করেন, আবার প্রধান সড়কের উপর সিএনজির স্টান্ড তৈরি করে রাস্তার অর্ধেক দখল করে রাখেন তারা।

একজন সিএনজি চালক মালিক সমিতির দিকে আঙুল তুলে বলেন, তাদের জন্য নির্দিষ্ট কোন স্টান্ড তৈরি করে না দেওয়ায় তারা রাস্তার উপর গাড়ি রেখে চালাতে হয়। এই চালকদের জন্য স্টান্ড করে দিলে তারা আর এখানে দাঁড়াবেনা বলেও জানান তিনি।
কয়েকজন হকার জানায়, দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করার মতো পুঁজি নেই। তাই সড়কেই পণ্য নিয়ে বসেছি। এখানে বসার জন্যও অনেককে চাঁদা দিতে হয়।

অন্যদিকে ফুটপাত দখল করা একজন মাছ ব্যবসায়ি বলেন, তারা পেটের দায়ে রাস্তায় এসে ব্যবসা করতেছেন, দোকান নিতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন তাই তারা বাধ্য হয়ে এখানে ব্যবসা করছেন।

কেবল হকারদের কারণে নয়, মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কারণেও এই সড়কে যানজট হয়। কারণ এখানকার বেশিরভাগ মার্কেটের পার্কিং প্লেস নেই। মার্কেটে আসা গাড়িগুলো সড়কেই পার্কিং করা হয়। ফলে সব সময় যানজট লেগে থাকে। উল্টো চৌমুহনী বাজারের ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কেরও বহুলাংশও দখল করে রেখেছেন তারা। ফলে দিনভর লেগে থাকে ভয়াবহ যানজট।

চৌমুহনী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ডেল্টা গেইট থেকে চৌমুহনীর পূর্ব বাজার বড় পোলেরলের পর পর্যন্ত এখানে সবচেয়ে বেশি যানজট হয়। এসব জায়গায় দিনভর যানজট লেগে থাকে।

ট্রাফিক পুলিশের ট্রাফিক ইনচার্জ আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানায়, চৌমুহনী বাজারের যানজট ও সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় আমরা বাড়তি সদস্য যোগ করেছি।
হকার সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হকারদের আগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে উচ্ছেদ করেও লাভ হবে না। এক্ষেত্রে প্রশাসন সহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফুর রহমান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি এই উপজেলায় নতুন এসেছেন, আর চৌমুহনী বাজারে এই যানযট নিরসন করতে হলে তার একক চেষ্টায় করা সম্ভব নয়, পূর্বের নির্বাহী কর্মকর্তা বার বার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছেন। কারণ অভিযান পরিচালনা করে আসার কিছুক্ষণ পরে আবার তারা আগের মত সব দখল করে নেয়। তাই যেখানে সেখানে রাস্তার উপর গাড়ি পার্কিং করা, লোড আনলোড করা, অবৈধ সিএনজি স্টেশন এবং ফুটপাত দখল করে হকার ও মাছ ব্যবসায়িদের উচ্ছেদ করতে হলে থানা, স্থানীয় মেয়র ও এমপি সহ একত্রিত হয়ে অভিযান পরিচালনা করলে হয়তো চৌমুহনী শহরকে চিরতরে যানযট মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

সর্বাধিক পঠিত

নোবিপ্রবি ছাত্রী হলে অগ্নিকাণ্ড, পরীক্ষা স্থগিত

চৌমুহনীতে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবসা, প্রধান সড়কে অবৈধ সিএনজি স্টেশান: অতিষ্ট নাগরিক জীবন

আপডেট: ০৯:৫০:৪৬ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার-
ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে রেখেছে হকার এবং সকল ধরনের ছোট খাটো কাচা বাজারের ব্যবসায়ীরা। আবার অন্যদিকে প্রধান সড়কের উপর অন্যায় ভাবে সিএনজির স্ট্যান্ড তৈরি করে যানযট সৃষ্টি করে রেখেছে একটি মহল। ঈদে মার্কেট করার জন্য আসা সকল ক্রেতাকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যস্ততম বানিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ চৌমুহনী বাজার হচ্ছে জেলাটির প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র, এই শহরে রাতদিন ২৪ ঘন্টায় হাজার হাজার ক্রেতা ও বিক্রেতার সমাগম ঘটে এই বাজারে। শুধু তাই নয় জেলার প্রতিটি জেলা-উপজেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামের বাজার গুলোর আমদানি রপ্তানি হয় এই চৌমুহনীর সাথে, সব ধরনের মালামাল এইখান থেকে পাইকারি নিয়ে ব্যবসা করেন তারা।

বেদখল হয়ে আছে চৌমুহনী বাজারের বেশিরভাগ ফুটপাত। ফুটপাতে পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন ভাসমান ব্যবসায়ীরা।ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কের অনেকাংশও তাদের দখলে। ফলে পথচারীদের হাঁটা চলারও সুযোগ নেই।এছাড়া পুরো বাজার জুড়ে লেগে থাকছে ভয়াবহ যানজট। হকারদের উপদ্রব আর যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং যানজট আরও বাড়িয়ে তুলছে।

হকার আর যানজট এই দুটিই এখন হয়ে উঠেছে বেগমগঞ্জ বাসীর প্রধান যন্ত্রণা। এই দুই যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না কিছুতেই। বরং দিন দিন যন্ত্রণা আরও তীব্র হচ্ছে। মাঝে মাঝে ফুটপাত হকারদের দখল থেকে মুক্ত করতে ও অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড উচ্ছেদে কিছু তৎপরতা চালানো হয়। তবে এতে খুব একটা সফলতা মেলে না।

ক্যামেরার সামনে আসতে না চাওয়া বেশ কয়েকজন পথচারী অভিযোগ করে বলেন, পথচারীদের হাটার যায়গা হচ্ছে ফুটপাত, আবার কিছু কাচা বাজার ব্যবসায়ী ও হকার রাস্তার মাঝখানে এসে দোকান পাট বসিয়ে দেয়। আর সেটাই দখল করে বিভিন্ন প্রকার ব্যবসা করতেছেন এই ব্যবসায়িরা, আর এদেরকে পরিচালনা করেন ক্ষমতাসিন কিছু লোকজন, এবং প্রতিদিন একটি চক্র প্রতিটি দোকান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে চাঁদা আদায় করে। এই অন্যায় ভাবে রাস্তা দখল করে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। আবার এই শহর দিয়ে নোয়াখালীর দক্ষিণ অঞ্চল, লক্ষ্মীপুর সহ চাঁদপুরের কয়েক হাজার গাড়ি দৈনিক ঢাকা চট্টগ্রাম যাতায়াত করে থাকে, কিন্তু এই শহরটির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কটির প্রস্ত কম থাকায় সব সময় জ্যাম লেগেই থাকে, তার উপর বিভিন্ন ধরনের মালের গাড়ি গুলো দাঁড় করিয়ে লোড আনলোড করেন, আবার প্রধান সড়কের উপর সিএনজির স্টান্ড তৈরি করে রাস্তার অর্ধেক দখল করে রাখেন তারা।

একজন সিএনজি চালক মালিক সমিতির দিকে আঙুল তুলে বলেন, তাদের জন্য নির্দিষ্ট কোন স্টান্ড তৈরি করে না দেওয়ায় তারা রাস্তার উপর গাড়ি রেখে চালাতে হয়। এই চালকদের জন্য স্টান্ড করে দিলে তারা আর এখানে দাঁড়াবেনা বলেও জানান তিনি।
কয়েকজন হকার জানায়, দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করার মতো পুঁজি নেই। তাই সড়কেই পণ্য নিয়ে বসেছি। এখানে বসার জন্যও অনেককে চাঁদা দিতে হয়।

অন্যদিকে ফুটপাত দখল করা একজন মাছ ব্যবসায়ি বলেন, তারা পেটের দায়ে রাস্তায় এসে ব্যবসা করতেছেন, দোকান নিতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন তাই তারা বাধ্য হয়ে এখানে ব্যবসা করছেন।

কেবল হকারদের কারণে নয়, মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কারণেও এই সড়কে যানজট হয়। কারণ এখানকার বেশিরভাগ মার্কেটের পার্কিং প্লেস নেই। মার্কেটে আসা গাড়িগুলো সড়কেই পার্কিং করা হয়। ফলে সব সময় যানজট লেগে থাকে। উল্টো চৌমুহনী বাজারের ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কেরও বহুলাংশও দখল করে রেখেছেন তারা। ফলে দিনভর লেগে থাকে ভয়াবহ যানজট।

চৌমুহনী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ডেল্টা গেইট থেকে চৌমুহনীর পূর্ব বাজার বড় পোলেরলের পর পর্যন্ত এখানে সবচেয়ে বেশি যানজট হয়। এসব জায়গায় দিনভর যানজট লেগে থাকে।

ট্রাফিক পুলিশের ট্রাফিক ইনচার্জ আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানায়, চৌমুহনী বাজারের যানজট ও সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় আমরা বাড়তি সদস্য যোগ করেছি।
হকার সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হকারদের আগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে উচ্ছেদ করেও লাভ হবে না। এক্ষেত্রে প্রশাসন সহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফুর রহমান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি এই উপজেলায় নতুন এসেছেন, আর চৌমুহনী বাজারে এই যানযট নিরসন করতে হলে তার একক চেষ্টায় করা সম্ভব নয়, পূর্বের নির্বাহী কর্মকর্তা বার বার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছেন। কারণ অভিযান পরিচালনা করে আসার কিছুক্ষণ পরে আবার তারা আগের মত সব দখল করে নেয়। তাই যেখানে সেখানে রাস্তার উপর গাড়ি পার্কিং করা, লোড আনলোড করা, অবৈধ সিএনজি স্টেশন এবং ফুটপাত দখল করে হকার ও মাছ ব্যবসায়িদের উচ্ছেদ করতে হলে থানা, স্থানীয় মেয়র ও এমপি সহ একত্রিত হয়ে অভিযান পরিচালনা করলে হয়তো চৌমুহনী শহরকে চিরতরে যানযট মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।