স্টাফ রিপোর্টার-
দিনে অভিযানের ভয়ে রাতভর সোচ্চার মাটিখেকোরা। প্রশাসনের নজর এড়াতে সারা রাত অবৈধভাবে কৃষিজমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটেন তারা। খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় গেলে পড়তে হয় নানা প্রতিবন্ধকতায়। কখনো সড়কে মাটি ফেলে আবার কখনো গাছ ফেলে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২ মে) ভোরে সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নে এমন ঘটনা ঘটে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা এলাকায় খেয়াল-খুশিমতো অবৈধভাবে কৃষিজমি থেকে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। দিনের বেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়ে রাতভর জাফর আহাম্মদ নামের একজনের মাটিকাটার অভিযোগে ঘটনাস্থলে যেতে চান সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিন মিয়া। এ সময় সড়কে মাটি ফেলে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন মাটিখেকো জাফর আহাম্মদ। পরে বিকল্প রাস্তা দিয়ে গিয়ে মাটিকাটার অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিন মিয়া। এ সময় মাটিকাটা ও বিক্রির অপরাধে জাফর আহাম্মদকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ভবিষ্যতে এমন অপরাধের পুনরাবৃত্তি করবে না মর্মে মুচলেকা গ্রহণ করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সহযোগিতা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আগে দিনে মাটি কাটত, এখন রাতে কাটে। মাটিকাটা চলছেই। কৃষিজমির মাটি ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। একটি চক্র সব মাটি নিয়ে যাচ্ছে। কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটিকাটার কারণে জমিগুলোতে চাষাবাদ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়া মাটি পরিবহনের কারণে এলাকার রাস্তাঘাট দ্রুত নষ্ট হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের অভিযানেও এসব মাটিকাটা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় না। আমরা চাই, এসব অবৈধ মাটিকাটা ও পরিবহনে স্থায়ীভাবে বন্ধ হোক। এটা আমাদের প্রাণের দাবি।
সোনাইমুড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিন মিয়া বলেন, মাটি ও বালু ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৪ ধারার অপরাধে জাফর আহাম্মদের কাছ থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। তিনি এই কাজের পুনরাবৃত্তি করবেন না বলেও মুচলেকা প্রদান করেছেন। জনস্বার্থে উপজেলা প্রশাসনের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ ফাতেমা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে অপরাধীরা কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রি করে আসছিলেন। অভিযোগ পেয়ে মাটিকাটার অপরাধে বিভিন্ন সময় ২০টি মামলায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের সতর্ক করা হয়েছে। কৃষিজমির উর্বর মাটি কাটার কারণে জমিগুলোতে চাষাবাদ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পাশাপাশি মাটি পরিবহনের কারণে এলাকার রাস্তাঘাট দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।