১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোয়াখালীতে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর

স্টাফ রিপোর্টার-
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত প্রার্থী এএইচএম খাইরুল আনম চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

বুধবার (৮ মে) রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর এবং বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকালে উপজেলার পূর্ব চরবাটা ও চরজব্বর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮ জনকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা গেছে, আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী আনারস প্রতীকে ৩৭ হাজার ৬৪৮ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী দোয়াত কলম প্রতীকে ৩৬ হাজার ৯৪৫ ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ আনারস প্রতীকে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী ৭০৩ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।বুধবার (৮ মে) রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর এবং আজ সকালে উপজেলার পূর্ব চরবাটা ও চরজব্বর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে হামলাকারীরা পরাজিত প্রার্থী দোয়াত কলম প্রতীকের এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমের অনুসারীদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করে।

খবর পেয়ে চরজব্বর থানা পুলিশ ও বিজিবির টহল দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ভোক্তভোগীরা জানায়, পরাজিত প্রার্থী খাইরুল আনম চৌধুরীর নির্বাচন করায় বিজয়ী প্রার্থী সাবাব চৌধুরীর সমর্থকরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের জাহাজ মারা, চেউয়্যাখালী, ভূইয়ারহাট ও সমিতির বাজারেও হামলা চালায়। এ সময় বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও দোয়াত-কলম প্রতীকের সমর্থক মো. হারুনুর রশিদ সোহাগ বলেন, গতকাল রাত ১২টার দিকে ৭ নাম্বার ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা মো. সোহেলের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন আমার বাসার টিনের বেড়া ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ সময় আমি ঘরের ভেতরেই ছিলাম। তারা ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আমাকে খোঁজে। আমি পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাই।

তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা আমার ৪ বছরের বাচ্চাকে আঘাত করে এবং যাওয়ার সময় আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। হামলাকারীরা একই এলাকার আরও দুটি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। আমি খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমকে জানিয়েছি।

হামলায় আহত ওমান প্রবাসী মো. আশরাফ বলেন, গতকাল রাত ৯টার দিকে বাজারের চা দোকানে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় স্থানীয় সিরাজ মেম্বারের নেতৃত্বে আনারস প্রতীকের সমর্থকদের ৮০-১০০ জনের একটি দল লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ৭ জন আহত হন।

বৃহস্পতিবার সকালে হামলার শিকার সৌদি প্রবাসী আলতাফ হোসেন বলেন, সকালে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক আনারস প্রতীকের কর্মী ইব্রাহিম খলিল আজগরের নেতৃত্বে আমার ওপর হামলা চালানো হয়। হাজী কালা মিয়ার বাড়িতেও হামলা চালায়।

চরজব্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল্লাহ বলেন, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে আজ সকাল পর্যন্ত পরাজিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর ও বসতবাড়িতে দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে বিজয়ী প্রার্থীর লোকজন।

অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন যুবলীগ নেতা মো. সোহেল ও ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহিম খলিল আজগর। তারা বলেন, সোহেলের বাড়িতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থীর অনুসারীদের সঙ্গে আনারস প্রতীকের প্রার্থীর অনুসারীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি।

সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক স্পিকার আবদুল মালেক উকিলের ছোট ছেলে বাহার উদ্দিন খেলন বলেন, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর চরজব্বর, পূর্ব চরবাটা ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির অনুসারীদের বাড়িঘর ও কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সামছুদ্দিনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর লোকজন তার ছেলের পক্ষ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। হামলার ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

হামলার অভিযোগের বিষয়ে নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী বলেন, আমার নেতাকর্মীকে শান্ত থাকতে বলেছি। কোথাও কোনো বিজয় উল্লাস হবে না বলেছি। আমরা সবাইকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ উপজেলায় থাকতে চাই। যারা হামলা করেছে তারা আমার সমর্থক নয়। আমিও চাই অপরাধীদের বিচার হোক।

এ বিষয়ে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু হামলার খবর পেয়ে আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ও হামলার শিকার লোকজন থানায় অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বাধিক পঠিত

নোবিপ্রবি ছাত্রী হলে অগ্নিকাণ্ড, পরীক্ষা স্থগিত

নোয়াখালীতে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর

আপডেট: ০১:১৪:০৪ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ১১ মে ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার-
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত প্রার্থী এএইচএম খাইরুল আনম চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

বুধবার (৮ মে) রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর এবং বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকালে উপজেলার পূর্ব চরবাটা ও চরজব্বর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮ জনকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা গেছে, আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী আনারস প্রতীকে ৩৭ হাজার ৬৪৮ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী দোয়াত কলম প্রতীকে ৩৬ হাজার ৯৪৫ ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ আনারস প্রতীকে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী ৭০৩ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।বুধবার (৮ মে) রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর এবং আজ সকালে উপজেলার পূর্ব চরবাটা ও চরজব্বর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে হামলাকারীরা পরাজিত প্রার্থী দোয়াত কলম প্রতীকের এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমের অনুসারীদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করে।

খবর পেয়ে চরজব্বর থানা পুলিশ ও বিজিবির টহল দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ভোক্তভোগীরা জানায়, পরাজিত প্রার্থী খাইরুল আনম চৌধুরীর নির্বাচন করায় বিজয়ী প্রার্থী সাবাব চৌধুরীর সমর্থকরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের জাহাজ মারা, চেউয়্যাখালী, ভূইয়ারহাট ও সমিতির বাজারেও হামলা চালায়। এ সময় বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও দোয়াত-কলম প্রতীকের সমর্থক মো. হারুনুর রশিদ সোহাগ বলেন, গতকাল রাত ১২টার দিকে ৭ নাম্বার ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা মো. সোহেলের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন আমার বাসার টিনের বেড়া ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ সময় আমি ঘরের ভেতরেই ছিলাম। তারা ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আমাকে খোঁজে। আমি পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাই।

তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা আমার ৪ বছরের বাচ্চাকে আঘাত করে এবং যাওয়ার সময় আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। হামলাকারীরা একই এলাকার আরও দুটি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। আমি খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমকে জানিয়েছি।

হামলায় আহত ওমান প্রবাসী মো. আশরাফ বলেন, গতকাল রাত ৯টার দিকে বাজারের চা দোকানে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় স্থানীয় সিরাজ মেম্বারের নেতৃত্বে আনারস প্রতীকের সমর্থকদের ৮০-১০০ জনের একটি দল লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ৭ জন আহত হন।

বৃহস্পতিবার সকালে হামলার শিকার সৌদি প্রবাসী আলতাফ হোসেন বলেন, সকালে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক আনারস প্রতীকের কর্মী ইব্রাহিম খলিল আজগরের নেতৃত্বে আমার ওপর হামলা চালানো হয়। হাজী কালা মিয়ার বাড়িতেও হামলা চালায়।

চরজব্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল্লাহ বলেন, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে আজ সকাল পর্যন্ত পরাজিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর ও বসতবাড়িতে দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে বিজয়ী প্রার্থীর লোকজন।

অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন যুবলীগ নেতা মো. সোহেল ও ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহিম খলিল আজগর। তারা বলেন, সোহেলের বাড়িতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থীর অনুসারীদের সঙ্গে আনারস প্রতীকের প্রার্থীর অনুসারীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি।

সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক স্পিকার আবদুল মালেক উকিলের ছোট ছেলে বাহার উদ্দিন খেলন বলেন, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর চরজব্বর, পূর্ব চরবাটা ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির অনুসারীদের বাড়িঘর ও কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সামছুদ্দিনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর লোকজন তার ছেলের পক্ষ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। হামলার ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

হামলার অভিযোগের বিষয়ে নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী বলেন, আমার নেতাকর্মীকে শান্ত থাকতে বলেছি। কোথাও কোনো বিজয় উল্লাস হবে না বলেছি। আমরা সবাইকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ উপজেলায় থাকতে চাই। যারা হামলা করেছে তারা আমার সমর্থক নয়। আমিও চাই অপরাধীদের বিচার হোক।

এ বিষয়ে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু হামলার খবর পেয়ে আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ও হামলার শিকার লোকজন থানায় অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।