১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোয়াখালীতে ৩৬ দিন পর এক যুবকের লাশ উত্তোলন, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

স্টাফ রিপোর্টার-
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় মৃত্যুর ৩৬ দিন পর মো.আলাউদ্দিন (২৬) নামে এক দিনমজুরের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।

বুধবার (১২ জুন) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমৃত দেবনাথের উপস্থিতিতে উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের বাটইয়া গ্রামের একটি কবরস্থান থেকে লাশটি উত্তোলন করা হয়। এর আগে, গত ১ মে উপজেলার যাদবপুর গ্রামে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এ.কে.এম সিরাজ উল্যার বাড়িতে যুবককে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

নিহত আলাউদ্দিন উপজেলার বাটইয়া গ্রামের মহিন উদ্দিনের ছেলে।

জানা যায়, এ ঘটনায় গত ৩জুন নিহতের মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এ.কে.এম সিরাজ উল্যাকে প্রধান আসামি করে নিশান (২২) ও কবির (৩০) নামে তিনজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত নামা ৫/৬জনকে আসামি করে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪নং আমলি আদালতে সিআর মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতে নির্দেশে কবিরহাট থানার পুলিশ হত্যা মামলা রুজু করেন।

নিহতের বাবা মহিন উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বাড়ির জায়গা নিয়ে সমস্যা হলে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ.কে.এম সিরাজ উল্যার কাছে বিচার প্রার্থনা করি। এরপর তিনি নিজেই জায়গাটি ক্রয় করে নিতে চায়। ওই জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ১ মে রাত ৯টার দিকে চেয়ারম্যান সিরাজ আমার ছেলে আলাউদ্দিনকে তার বাড়িতে ডেকে নেয়। এরপর সেখানে দুই দিন আটকে রেখে তার অনুসারী নিশান ও কবিরসহ তারা আমার ছেলেকে লোহার রড, জিআই পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে মাথা, হাঁটু, চোখসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম করে। পরে কে বা কাহারা গুরুত্বর আহত অবস্থায় আলাউদ্দিনকে কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার অবস্থার অবনতি হলে ৫মে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্রগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করে। ৬ মে ভোর রাতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ৭ মে তাকে পারিবারিক করস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ সিরাজ চেয়ারম্যানের বড় ভাই ডা.জাফর উল্যাহ কে জানালে তিনি বিষয়টি বাড়িতে এসে সুরাহা করবেন বলে জানায়। এরপর তিনি চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে চিকিৎসার কাগজপত্র না দিয়ে শুধু মাত্র আমার ছেলের মৃত্যুর সনদ দিয়ে রিলিজ করে দেয়। ১নং আসামি চেয়ারম্যান সিরাজের বড় ভাই ডা.জাফরের কালক্ষেপণের কারণে আমাদের মামলা করতে বিলম্ব হয়। তিন বছর আগে এই সিরাজ চেয়ারম্যান আমাকেও তুলে নিয়ে মারধর করে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. জাফর উল্যাহ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমার এলাকার লোক আমার কাছে কোনো কাজে আসলে আমি সাহায্য করি।

নরোত্তমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ.কে.এম সিরাজ উল্যা অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এক সময় তারা জমি বিক্রি করতে চাইছে আমি ক্রয় করিনি। আমি এক একজন জনপ্রতিনিধি আমার কাজ হচ্ছে মানুষের জানমাল রক্ষা করা। আমি কোন ভাবেই এই ঘটনার সাথে জড়িত নেই। ইনশাআল্লাহ একদিন এটা প্রমাণ হবে।

কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবির বলেন, নিহতের মা আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত থানায় মামলাটি রুজু করার নির্দেশ দেয়। আদালতের আদেশে তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা রের্কড করা হয়েছে। একই সাথে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তের স্বার্থে কবর থেকে ভিকটিমের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি ও ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বাধিক পঠিত

নোবিপ্রবি ছাত্রী হলে অগ্নিকাণ্ড, পরীক্ষা স্থগিত

নোয়াখালীতে ৩৬ দিন পর এক যুবকের লাশ উত্তোলন, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

আপডেট: ১১:৪৪:০৮ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ১২ জুন ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার-
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় মৃত্যুর ৩৬ দিন পর মো.আলাউদ্দিন (২৬) নামে এক দিনমজুরের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।

বুধবার (১২ জুন) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমৃত দেবনাথের উপস্থিতিতে উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের বাটইয়া গ্রামের একটি কবরস্থান থেকে লাশটি উত্তোলন করা হয়। এর আগে, গত ১ মে উপজেলার যাদবপুর গ্রামে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এ.কে.এম সিরাজ উল্যার বাড়িতে যুবককে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

নিহত আলাউদ্দিন উপজেলার বাটইয়া গ্রামের মহিন উদ্দিনের ছেলে।

জানা যায়, এ ঘটনায় গত ৩জুন নিহতের মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এ.কে.এম সিরাজ উল্যাকে প্রধান আসামি করে নিশান (২২) ও কবির (৩০) নামে তিনজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত নামা ৫/৬জনকে আসামি করে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪নং আমলি আদালতে সিআর মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতে নির্দেশে কবিরহাট থানার পুলিশ হত্যা মামলা রুজু করেন।

নিহতের বাবা মহিন উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বাড়ির জায়গা নিয়ে সমস্যা হলে নরোত্তমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ.কে.এম সিরাজ উল্যার কাছে বিচার প্রার্থনা করি। এরপর তিনি নিজেই জায়গাটি ক্রয় করে নিতে চায়। ওই জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ১ মে রাত ৯টার দিকে চেয়ারম্যান সিরাজ আমার ছেলে আলাউদ্দিনকে তার বাড়িতে ডেকে নেয়। এরপর সেখানে দুই দিন আটকে রেখে তার অনুসারী নিশান ও কবিরসহ তারা আমার ছেলেকে লোহার রড, জিআই পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে মাথা, হাঁটু, চোখসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম করে। পরে কে বা কাহারা গুরুত্বর আহত অবস্থায় আলাউদ্দিনকে কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার অবস্থার অবনতি হলে ৫মে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্রগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করে। ৬ মে ভোর রাতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ৭ মে তাকে পারিবারিক করস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ সিরাজ চেয়ারম্যানের বড় ভাই ডা.জাফর উল্যাহ কে জানালে তিনি বিষয়টি বাড়িতে এসে সুরাহা করবেন বলে জানায়। এরপর তিনি চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে চিকিৎসার কাগজপত্র না দিয়ে শুধু মাত্র আমার ছেলের মৃত্যুর সনদ দিয়ে রিলিজ করে দেয়। ১নং আসামি চেয়ারম্যান সিরাজের বড় ভাই ডা.জাফরের কালক্ষেপণের কারণে আমাদের মামলা করতে বিলম্ব হয়। তিন বছর আগে এই সিরাজ চেয়ারম্যান আমাকেও তুলে নিয়ে মারধর করে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. জাফর উল্যাহ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমার এলাকার লোক আমার কাছে কোনো কাজে আসলে আমি সাহায্য করি।

নরোত্তমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ.কে.এম সিরাজ উল্যা অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, এক সময় তারা জমি বিক্রি করতে চাইছে আমি ক্রয় করিনি। আমি এক একজন জনপ্রতিনিধি আমার কাজ হচ্ছে মানুষের জানমাল রক্ষা করা। আমি কোন ভাবেই এই ঘটনার সাথে জড়িত নেই। ইনশাআল্লাহ একদিন এটা প্রমাণ হবে।

কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবির বলেন, নিহতের মা আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত থানায় মামলাটি রুজু করার নির্দেশ দেয়। আদালতের আদেশে তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা রের্কড করা হয়েছে। একই সাথে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তের স্বার্থে কবর থেকে ভিকটিমের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি ও ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।