স্টাফ রিপোর্টার:
নোয়াখালীতে হাসপাতালের জন্য ভবন ভাড়া নেওয়ার চুক্তি করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রবাসীকে জিম্মি করে সে ভবন ও ভবনের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে ভাড়াটিয়া প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, বেগমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ইতালি প্রবাসী আহসান উল্যাহ ও তার স্ত্রী রাশেদা আক্তার নোয়াখালী পৌরসভার হাউজিং এলাকায় (নোয়াখালী সদর উপজেলার সাবেক ৯৫ নং হালে ১০৬ নং কৃষ্ণরামপুর মৌজার অন্তর্গত ১০ নং জমাখারিজ খতিয়ান হতে আগত, ১৯৯১ নং জমাখারিজ ভুক্ত, হালে ৩০৭৬ দাগের মং-৬.৭৪ ডিং ভুমি, যাহা বাংলাদেশ হাউজ বিলডিং কর্পোরেশন এর সেন্ট্রাল রোড় এর পশ্চিম প্বার্শে প্রণিত নকশার ৩২ নাম্বার প্লট) জায়গাটি স্বামী স্ত্রীর যৌথ নামে ক্রয় করে। ২০২২ সালে তারা জায়গাটিতে একটি বহুতল ভবনের কাজ শুরু করলে বেগমগঞ্জ বাংলাবাজারের বাসিন্দা মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও লক্ষীপুর পাঁচপাড়ার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন যৌথ ভাবে (ইউনিএইড হাসপতাল) হসপিটাল করার জন্য ভবনটি ভাড়া নেওয়ার প্রস্তাব করে।সে লক্ষ্যে ভবনের মালিক আহসান উল্যাহ ও রাশেদা আক্তার সরল মনে ভবনটির গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে নবম তলা পর্যন্ত (আনুমানিক ২৫,২০০ বর্গফুট) এক কোটি টাকা অগ্রিম ভাড়া বাবৎ ১৫ বছরের জন্য ভাড়া দেওয়ার চুক্তি করে। কিন্তু মাহবুবুর রহমান ও সোহরাব হোসেনের উদ্দেশ্য ছিলো ভবন ভাড়া নেওয়ার নাম করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এবং প্রতারণা করে ভবনটি দখল করা। তারই ধারাবাহিকতায় ভবন বাড়ার চুক্তি হওয়ার কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা নোয়াখালী পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ পিন্টু সহ স্থানীয় আঃলীগের কয়েকজন নেতাকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে ভবনের মালিক আহসান উল্যাহকে জিম্মি করে ১৫ বছরের জায়গায় ২০ বছরের চুক্তিনামায় সই করায়। কিন্তু আহসান উল্যাহর স্ত্রী রাশেদা আক্তার এই অবৈধ (দ্বিতীয়) চুক্তি নামায় সই করেননি।
শুধু এতটুকুতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি দখলদার মাহবুব, সোহরাব প্রতারকচক্র। ২০২৪ সালের মাঝামাঝিতে ভবনটির ৮ তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই এবং দেওয়াল নির্মাণের কাজ শেষ করে মালিকপক্ষ। এরমধ্যেই ২০২৪ সালের জুন মাসের ১ তারিখে মাহবুব ও সোহরাব আবারো আওয়ামিলীগের নেতাদের দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে মালিকপক্ষের সাথে আরেকটা চুক্তি সই করে। সে চুক্তি টি ছিলো ভাড়াটিয়া ভবনের নবম তলার ছাদ এবং ভবনের বাকী আনুসাঙ্গিক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করবে , তার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া ভবনটির অর্ধেক সাড়ে চারতলার মালিকানা পাবে। এমন সুবিধাজনক ও লোভনীয় অবৈধ চুক্তি সম্পন্ন করেও থেমে যায়নি প্রতারকচক্র। তারা ভবনের কোন নির্মাণ কাজ না করেই পুরো ভবনটি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠে। তার জের ধরেই গত ৩০ ই জুন গভীত রাতে (আনুমানিক ০২ টার পর) ভবনের মালিক আহসান উল্যাহ কে সুধারাম মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনিকে দিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়ে থানায় ধরে নিয়ে আসে। থানায় নিয়ে আসার পর ওসি রনি এবং আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতা ভবনটি ভাড়াটিয়া মাহবুব ও সোহরাবকে লিখে দিতে চাপ দিতে থাকে এবং বিভিন্ন হুমকিধামকি প্রদান করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , মালিকপক্ষ যতটুকু কাজ করেছে (আট তলার ছাদ কমপ্লিট) ঠিক ততটুকু পর্যন্ত সে অবস্থাতেই পড়ে আছে। তবে ভবনের দু পাশে দুইটা সাইনবোর্ড ঝুলানো আছে। সাইনবোর্ডে লেখা বায়না সুত্রে এই ভবন ও জমির মালিক ইউনিএইড হসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানায়, আমরা জানতাম ভবনটির মালিক একজন প্রবাসী কিন্তু গত কয়েকমাস একদিন রাতের অন্ধকারে কে বা কাহারা এই সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়।
সরেজমিনে গিয়ে আরো জানা যায়, গত পরশু রাতে হাউজিংয়ের স্থানীয় কিছু কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দিয়ে মাহবুব ও সোহরাব রাতের বেলায় ভবনটির সামনে একটি টিনশেড দোকান ঘর নির্মাণ করে।তবে সেখানে গিয়ে দোকানে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা মনে করেন এই ভবন এবং ভবনের জায়গাটি দখল করার জন্যই ভবনের এ দোকানঘর নির্মাণ করেছে দখলদার প্রতারকচক্র।
ভবনটির মালিক ভুক্তভোগী প্রবাসী আহসান উল্যাহর বড় ভাই সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ জমি এবং ভবন আমার ভাইয়ের সারা জীবনের প্রবাসের উপার্জনের ফসল। ভাড়াটিয়া মাহবুব ও সোহরাব এখন এগুলো দখলের চেষ্টা করতেছে। পরশু আমাদের ভবনের সামনে রাতের অন্ধকারে টিনশেড ঘর নির্মাণের পর গতকাল রাতে সে ঘরে ফ্লোর ঢালাই শুরু করে। আমি খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে থানায় অভিযোগ দায়ের করি। এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, বর্তমান সরকার এবং প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার চাই।
সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ভবনের মালিকের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগপত্র পায়৷ এবং পুলিশ তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় তদন্ত করে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।