বাবার মৃত্যুর খবরে ৬ মাসের শিশু আরফানকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামে গিয়েছিলেন মা এলিনা ইয়াসমিন। বাবাকে কবরে রেখে ভাই-ভাবি ও বোনকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার ঢাকায় ফিরছিলেন তিনি।
রাজধানীর কমলাপুরের খানিকটা দূরে গোপীবাগে প্রবেশ করতেই ট্রেনটির কয়েকটি বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এসময় সন্তানকে বোন ডেইজির কোলে তুলে দেন এলিনা। বোনের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ট্রেন থেকে লাফিয়ে নামেন তিনি। পেছনে তাকিয়ে এলিনাকে আর খুঁজে পাননি।
গোপীবাগে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ওই ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ আছেন এলিনা ইয়াসমিন। পরিবারের সদস্যরা ধারণা করছেন, আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছেন এলিনা। পুলিশ বলছে, মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষার পরেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
শনিবার দুপুরের দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্ত্রীকে খুঁজছিলেন স্বামী সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আরফানের নানা (এলিনার বাবা) ১০ দিন আগে মারা যান। এজন্য ছেলেকে নিয়ে রাজবাড়ী গিয়েছিল এলিনা। পরে সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার পথে তাদের ট্রেনে আগুনের ঘটনা ঘটে।’
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলের হার্টের সমস্যা। তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাবো। এজন্য এলিনাকে বলেছিলাম দ্রুত ঢাকায় চলে আসতে। ঘটনার দিন আমি তাদের রিসিভ করার জন্য কমলাপুর স্টেশনে যাই। সেখানে স্ত্রীকে না পেয়ে ভেঙে পড়ি।
ট্রেনে এলিনা তার বোন ডেজি আখতার রুনার কোলে ছেলেকে দিয়েছিলেন বলে জানান সাজ্জাদ। তিনি বলেন, ‘আগুন লাগলে ট্রেন থেকে ডেইজি তার ছেলে রিহান (৮) ও দিহানকে (১১) নিয়ে নেমে পড়েন। এসময় ডেইজির কোলেই ছিল আরফান। তাদের বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।’
সাজ্জাদ হোসেনের ধারণা, সন্তানকে বোনের কোলে দিয়ে ব্যাগ আনতে ভিতরে গিয়েছিলেন এলিনা। কারণ সেই ব্যাগেই ছিল সন্তানের চিকিৎসার কাগজপত্র।
ওই ব্যাগ নিয়ে আর ফেরা হয়নি এলিনার। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। মর্গে যে চারটি লাশ রয়েছে সেগুলো দেখেও শনাক্ত করা যাচ্ছে না। ডিএনএ টেস্টের পরেই বোঝা যাবে।