১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নোয়াখালীর ২ নাবিকের পরিবারের ঈদ আনন্দ মহাসাগরে তলিয়ে গেছে,শঙ্কা-প্রতীক্ষায় কাটছে দিন

 

স্টাফ রিপোর্টার-

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে জিম্মি নোয়াখালীর নাবিক আনোয়ারুল হক রাজু (২৭) ও ছালেহ আহমদের (৪৩) পরিবারে নেই ঈদের আমেজ। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে ঈদকে সামনে রেখে তাদের পরিবারে হচ্ছেনা কোনো ধরনের কেনাকাটা। নেই ভালো কিছু রান্নার প্রস্তুতিও।

 

গত রোববার সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় দুই অপহৃত নাবিকদের স্বজনদের সাথে। অন্যান্য বারের ঈদগুলো খুশির থাকলেও এবার ঈদ তাদের কাছে নীরব কান্নার। একই সাথে বয়ে বেড়াচ্ছে শঙ্কা ও প্রতীক্ষা। পরিবারের উপার্জনশীল প্রিয় ব্যক্তিদের বন্দিদশায় মহাসাগরে তলিয়ে গেছে তাদের ঈদ আনন্দ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঈদুল ফিতরের আগে ২৩ নাবিকের মুক্তির আকুতি স্বজনদের।

 

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি রাজু নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের রামপুর গ্রামের আজিজুল হক মাস্টারের ছেলে। অপর জিম্মি ছালেহ আহমদ চাটখিল উপজেলার সিংবাহুড়া গ্রামের মৃত সাখায়াত উল্যার ছেলে। তিনি জাহাজটিতে ফাইটার পদে কর্মরত।

গত ১২ মার্চ বাংলাদেশী বাণিজ্য জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে ২৩জন নাবিকসহ অপহরণ করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। ২৩ নাবিকের মধ্যে ছিল নোয়াখালীর এই দুই যুবক।

 

রাজুর বাবা আজিজুল হক মাস্টার বলেন, রাজু বাড়িতে এসে ঈদ করার কথা ছিল। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে রাজু সবার ছোট। গত নভেম্বরের শেষ দিকে রাজু সিঙ্গাপুর থেকে জাহাজে ওঠে। এরপর গত ২০ দিন ছেলের বন্দিদশায় বদলে গেছে পরিবারের চিত্র। ঈদের আগেই যেন আমার সন্তানসহ সকল নাবিকের মুক্তির ব্যবস্থা করে সরকার।

 

রাজুর মা দৌলত আরা বেগম বলেন, আমরা খুবই কষ্টে দিন অতিবাহিত করছি। প্রধানমন্ত্রী ঈদের আগেই যেন আমার ছেলেসহ জিম্মি সবাইকে ছাড়িয়ে আনে। ছেলে ছাড়া আমাদের কোনো ঈদ আনন্দ নেই।

 

রাজুর বড় বোন কামরুন নাহার রুমি বলেন, বাড়িতে নতুন ঘরের কাজ চলছে রাজুর বিয়েকে উপলক্ষ করে। ছেলের স্মৃতি চারণ করে এখন বাবা-মা শোকে মুহ্যমান। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পালা করে চলছে শোকের মাতম।

 

অপরদিকে, স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে ছালেহ আহমদের ছোট পরিবার। তিনিই পরিবারের এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ছালেহ আহমদ গত বছর ঈদ করেছেন কর্মস্থলে। স্ত্রী ও তিন কন্যার আশা ছিল এবার তাদের সঙ্গে ঈদ করবে। কিন্তু স্বামী জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার খবরে এলামেলো হয়ে যায় স্বাভাবিক জীবন। তিন মেয়েকে নিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ ছালেহের স্ত্রী তানিয়া আক্তার। যেন তারা বেঁচে থেকেও মৃত। তানিয়া ছোট ছোট তিন মেয়েকে নিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে স্বামীর। একেবারে নিকট আত্মীয় ছাড়া কারো সাথে কথা বলছেনা।

 

স্থানীয়রা বলেন, অপহৃত নাবিকদের ভাগ্যে কি ঘটেছে সেই শঙ্কায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি নাবিকদের পরিবারে। তবে সবার প্রত্যাশা এমন উৎকন্ঠার সময় পেরিয়ে ফিরে আসুক তাদের স্বজন।

 

ছালেহ আহমদের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, এখন নিজেরা নিজেদের সান্ত¡না দিতে চেষ্টা করছি এই ভেবে যে এখনো সময় আছে স্বামী ফিরবে। সরকার ২৩জনকে নাবিককে ঈদের আগে ফিরিয়ে আনবে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।

 

সর্বাধিক পঠিত

নোবিপ্রবি ছাত্রী হলে অগ্নিকাণ্ড, পরীক্ষা স্থগিত

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নোয়াখালীর ২ নাবিকের পরিবারের ঈদ আনন্দ মহাসাগরে তলিয়ে গেছে,শঙ্কা-প্রতীক্ষায় কাটছে দিন

আপডেট: ০৭:০৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০২৪

 

স্টাফ রিপোর্টার-

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে জিম্মি নোয়াখালীর নাবিক আনোয়ারুল হক রাজু (২৭) ও ছালেহ আহমদের (৪৩) পরিবারে নেই ঈদের আমেজ। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে ঈদকে সামনে রেখে তাদের পরিবারে হচ্ছেনা কোনো ধরনের কেনাকাটা। নেই ভালো কিছু রান্নার প্রস্তুতিও।

 

গত রোববার সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় দুই অপহৃত নাবিকদের স্বজনদের সাথে। অন্যান্য বারের ঈদগুলো খুশির থাকলেও এবার ঈদ তাদের কাছে নীরব কান্নার। একই সাথে বয়ে বেড়াচ্ছে শঙ্কা ও প্রতীক্ষা। পরিবারের উপার্জনশীল প্রিয় ব্যক্তিদের বন্দিদশায় মহাসাগরে তলিয়ে গেছে তাদের ঈদ আনন্দ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঈদুল ফিতরের আগে ২৩ নাবিকের মুক্তির আকুতি স্বজনদের।

 

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি রাজু নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের রামপুর গ্রামের আজিজুল হক মাস্টারের ছেলে। অপর জিম্মি ছালেহ আহমদ চাটখিল উপজেলার সিংবাহুড়া গ্রামের মৃত সাখায়াত উল্যার ছেলে। তিনি জাহাজটিতে ফাইটার পদে কর্মরত।

গত ১২ মার্চ বাংলাদেশী বাণিজ্য জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে ২৩জন নাবিকসহ অপহরণ করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। ২৩ নাবিকের মধ্যে ছিল নোয়াখালীর এই দুই যুবক।

 

রাজুর বাবা আজিজুল হক মাস্টার বলেন, রাজু বাড়িতে এসে ঈদ করার কথা ছিল। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে রাজু সবার ছোট। গত নভেম্বরের শেষ দিকে রাজু সিঙ্গাপুর থেকে জাহাজে ওঠে। এরপর গত ২০ দিন ছেলের বন্দিদশায় বদলে গেছে পরিবারের চিত্র। ঈদের আগেই যেন আমার সন্তানসহ সকল নাবিকের মুক্তির ব্যবস্থা করে সরকার।

 

রাজুর মা দৌলত আরা বেগম বলেন, আমরা খুবই কষ্টে দিন অতিবাহিত করছি। প্রধানমন্ত্রী ঈদের আগেই যেন আমার ছেলেসহ জিম্মি সবাইকে ছাড়িয়ে আনে। ছেলে ছাড়া আমাদের কোনো ঈদ আনন্দ নেই।

 

রাজুর বড় বোন কামরুন নাহার রুমি বলেন, বাড়িতে নতুন ঘরের কাজ চলছে রাজুর বিয়েকে উপলক্ষ করে। ছেলের স্মৃতি চারণ করে এখন বাবা-মা শোকে মুহ্যমান। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পালা করে চলছে শোকের মাতম।

 

অপরদিকে, স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে ছালেহ আহমদের ছোট পরিবার। তিনিই পরিবারের এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ছালেহ আহমদ গত বছর ঈদ করেছেন কর্মস্থলে। স্ত্রী ও তিন কন্যার আশা ছিল এবার তাদের সঙ্গে ঈদ করবে। কিন্তু স্বামী জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার খবরে এলামেলো হয়ে যায় স্বাভাবিক জীবন। তিন মেয়েকে নিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ ছালেহের স্ত্রী তানিয়া আক্তার। যেন তারা বেঁচে থেকেও মৃত। তানিয়া ছোট ছোট তিন মেয়েকে নিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে স্বামীর। একেবারে নিকট আত্মীয় ছাড়া কারো সাথে কথা বলছেনা।

 

স্থানীয়রা বলেন, অপহৃত নাবিকদের ভাগ্যে কি ঘটেছে সেই শঙ্কায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি নাবিকদের পরিবারে। তবে সবার প্রত্যাশা এমন উৎকন্ঠার সময় পেরিয়ে ফিরে আসুক তাদের স্বজন।

 

ছালেহ আহমদের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, এখন নিজেরা নিজেদের সান্ত¡না দিতে চেষ্টা করছি এই ভেবে যে এখনো সময় আছে স্বামী ফিরবে। সরকার ২৩জনকে নাবিককে ঈদের আগে ফিরিয়ে আনবে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।