মোঃ নুর হোসাইন-
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী জেলায় ৬টি সংসদীয় আসনে ৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাদের মধ্যে ১০ জন ছাড়া বাকি ২৩ জন জামানত হারিয়েছেন। মূলত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও তাদের দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া সব প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো প্রার্থীকে জামানত রক্ষা করতে হলে মোট বৈধ ভোটের (কাস্টিং ভোট) আট ভাগের এক ভাগ থেকে অন্তত একটি ভোট বেশি পেতে হবে। রোববার (৭ জানুয়ারি) রাতে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আনুষ্ঠানিকভাবে জেলার ছয় আসনের ফল ঘোষণা করেন।
ফলাফলে দেখা গেছে, নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনটিতে মোট ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন। তারমধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকের এইচ এম ইব্রাহিম পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৯১ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু নাছের ওবায়েদ ফারুক ডাব প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ৩৩৩ ভোট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের একেএম সেলিম ভূঁইয়া ফুলের মালা প্রতীকে পেয়েছেন ২৮১৯ ভোট, গণফ্রন্টের মো. খোরশেদ আলম মাছ প্রতীকে পেয়েছেন ৯৭৭ ভোট
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. মমিনুল ইসলাম মোমবাতি প্রতীকে পেয়েছেন ১৮৮৯ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. শাহ আলম চেয়ার প্রতীকে পেয়েছেন ২০৯১ ভোট ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) মো. হারুন-অর-রশিদ (মশাল) প্রতীকে পেয়েছেন ১৮১০ ভোট। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইব্রাহিম ছাড়া বাকি সবাই জামানত হারিয়েছেন। মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ২১০টি, বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৫৪টি, সর্বমোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৬৪টি এবং প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার হলো ৪৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী) আসনটিতে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী করেছেন। তারমধ্যে ১১৮ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোরশেদ আলম পেয়েছেন ৫৬ হাজার ১৮৬টি ভোট, আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক (ট্রাক প্রতীক) পেয়েছেন ৫২ হাজার ৮৬৩ ভোট, জাসদের নাইমুল আহসান (মশাল) পেয়েছেন ৩৬৫ ভোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ (টেলিভিশন) পেয়েছেন ২১৭ ভোট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রবিউল হোসাইন (ছড়ি) পেয়েছেন ১৫৯ ভোট, জাতীয় পার্টির তালেবুজ্জামান (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৭৫২ ভোট ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির কাজী সরওয়ার আলম (হাতঘড়ি) পেয়েছেন ১৬১ ভোট। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোরশেদ আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক ছাড়া বাকি সবাই জামানত হারিয়েছেন। এ আসনে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৭০৩টি, বাতিল হওয়া ভোটের সংখ্যা তিন হাজার ৩২৬টি। সর্বমোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা এক লাখ ১৪ হাজার ২৯টি এবং প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার হলো ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনটিতে ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী করেছেন। তারমধ্যে ১৪৯ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরন পেয়েছেন|
৫৬ হাজার ৪৩৭ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনহাজ আহমেদ জাভেদ (ট্রাক প্রতীক) পেয়েছেন ৫১ হাজার ৮৮৫ ভোট, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের মহি উদ্দিন (চাকা) পেয়েছেন ৫৩২ ভোট, জাতীয় পার্টির ফজলে এলাহী সোহাগ (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৩৪৮ ভোট, জাসদের জয়নাল আবেদিন (মশাল) পেয়েছেন ১৪৭ ভোট ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক দলের মো. সুমন আল হোসাইন ভূঁইয়া (ছড়ি) পেয়েছেন ১১৮ ভোট। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনহাজ আহমেদ জাভেদ ছাড়া বাকি সবাই জামানত হারিয়েছেন। এ আসনে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ছিল এক লাখ নয় হাজার ৪৬৭টি, বাতিল হওয়া ভোটের সংখ্যা দুই হাজার ৩৩৩টি, সর্বমোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা এক লাখ ১২ হাজার ১৩৩টি এবং প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার হলো ২৩ দশমিক ৭১ শতাংশ।
নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনটিতে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী করেছেন। তারমধ্যে ১৯৬ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী পেয়েছেন এক লাখ ২৮ হাজার ৭৬৪টি ভোট, শিহাব উদ্দিন শাহিন (ট্রাক প্রতীক) পেয়েছেন ৪৭ হাজার ৫৭৩ ভোট, জাতীয় পার্টির মোবারক হোসেন আজাদ (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৯২৩ ভোট ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ আবদুল আলিম (চেয়ার) পেয়েছেন ৯৬২ ভোট। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী একরামুল করিম চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শিহাব উদ্দিন শাহীন ছাড়া বাকি সবাই জামানত হারিয়েছেন। এ আসনে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৭৮ হাজার ২২২টি, বাতিল হওয়া ভোটের সংখ্যা চার হাজার ৬৩৪টি, সর্বমোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা এক লাখ ৮২ হাজার ৮৫৬টি এবং প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার হলো ২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনটিতে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী করেছেন। তারমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৩২ কেন্দ্রে পেয়েছেন ১ লাখ ৮১ হাজার ২৭৯ ভোট, খাজা তানভীর আহমেদ (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৯ হাজার ৭০২ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা (চেয়ার) পেয়েছেন ১৪৯৩ ভোট, জাসদের মোহাম্মদ মকছুদের রহমান (মশাল) পেয়েছেন ২১৩২ ভোট ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের শাকিল মাহমুদ চৌধুরী (ছড়ি) পেয়েছেন ২১৩২ ভোট। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওবায়দুল কাদের ছাড়া বাকি সবাই জামানত হারিয়েছেন। এ আসনে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯৬ হাজার ৭৪০টি, বাতিল হওয়া ভোটের সংখ্যা চার হাজার ৪৯৪টি, সর্বমোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা দুই লাখ এক হাজার ২৩৪টি এবং প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার হলো ৪৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনটিতে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী করেছেন। তারমধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী পেয়েছেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫ ভোট, জাতীয় পার্টির মুশফিকুর রহমান লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৩৩ ভোট ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক (ছড়ি) পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৩৫ ভোট। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী ছাড়া বাকি সবাই জামানত হারিয়েছেন। এ আসনে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৪ হাজার ৩৮৬টি, বাতিল হওয়া ভোটের সংখ্যা চার হাজার ১৮টি, সর্বমোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা দুই লাখ ছয় হাজার ৪০৪টি এবং প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার হলো ৬৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা দেওয়ান মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, নোয়াখালীতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। সব থেকে বেশি ভোটগ্রহণ হয়েছে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে। হাতিয়ায় ভোটের শতকরা হার হলো ৬৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।
জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মেছবাহ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিটি নির্বাচনী আসনের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোট প্রদত্ত বৈধ ভোটের আট ভাগের এক ভাগ না পেলে তিনি জামানত ফেরত পাবেন না। এ হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালীর ছয়টি আসনে ৩৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৩ জন জামানত ফেরত পাবেন না।
২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ