মোঃ নুর হোসাইন
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়নের ম্যাকপার্শ্বান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তিনি বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন সময়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কে জোর পূর্বক তার বাড়ীতে নিয়ে ধান সিদ্ধের কাজে লাগান।
সম্প্রতি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র জিল্লুর রহমানকে তার বাড়ীতে কাজ করাতে নিয়ে গেলে সে আহত হয়ে বর্তমানে চিকিৎস্যাধীন অবস্থায় রয়েছে।আহত শিক্ষার্থী জিল্লুর রহমানের বাবা জাবের উদ্দিন বলেন আমার ছেলে আজ প্রায় ১৪ দিন যাবৎ আহত হয়ে চিকিৎস্যাধীন অবস্থায় বাড়ীতে রয়েছে। সে স্কুলে ও যেতে পারছেনা। কাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে উন্নত চিকিৎস্যার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে।
এদিকে সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করার পরও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বহাল তবিয়তে থাকায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন তানভীর শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার নামে অসংখ্য অভিভাবক থেকে টাকা নিয়েছেন, বিদ্যালয়ে বার্ষিক বরাদ্দের নামমাত্র কাজ দেখিয়ে সব টাকা আত্মসাৎ করেন, এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে বহিরাগতদের দিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গঠন করেন। এছাড়া ক্লাস না নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঘুমান তিনি। শিক্ষকদের এসিআর দিতে টাকা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।
এসব বিষয়ে অভিযোগের তদন্ত চেয়ে ১৪-০১-২০২৪ খ্রিঃ তারিখে বিদ্যালয়টির দাতা সদস্য জনাব আবুল কালাম একটি চিঠি পাঠিয়ে জেলা প্রাথামিক শিক্ষা অফিসারের কাছে আবেদন করেন।
এর আগেও এ সব বিষয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনির উদ্দিন বলেন। আমি অত্র স্কুলের বর্তমান ও সাবেক কমিটির সদস্য। তবে বর্তমান সভাপতি কিভাবে নির্বাচিত সে বিষয়ে কিছুই জানিনা। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, টাকা আতœসাৎসহ এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের অসংখ্য অভিযোগ। তারা উনাকে আর এখানে দেখতে চাননা। গতকিছুদিন আগেও তিনি দুই ছাত্রকে ধান সিদ্ধের কাজে বাড়ীতে নিয়ে গেলে এক ছাত্র আহত হয়। আমরা স্কুলের সুন্দর পরিবেশ চাই। ছাত্র/ছাত্রীদের ভালোভাবে পড়া লেখা হোক সেটাই চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, হাতিয়া গরীব এলাকা। এখানে এমনিতে শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ আছে। তার উপর এমন প্রধান শিক্ষক থাকলে শিক্ষার বারটা বাজবে।
এ বিষয়ে জানার জন্য অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন তানভীর কে কল করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে মুঠোফোনে কিছু বলতে রাজী হননি। আজ বেলা বারোটার দিকে কালবেলা নোয়াখালী ব্যুরো অফিস থেকে সংবাদ সংগ্রহের জন্য সরেজমিনে গিয়েও স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুদ্দিন তানভীরের দেখা পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনসুর আলী চৌধুরী বলেন। অভিযোগের বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর অভিযোগ প্রমানিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ