১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝুপড়ি ঘরে ৯ সদস্যের বসবাস, বিয়ে হচ্ছে না মেয়েদের

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট: ০৮:৫৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • ১৫৬৮

স্টাফ রির্পোটার-
অর্থের অভাবে প্রায় চার বছর ধরে নিজের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ৬ মেয়ে, ১ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে জরাজীর্ণ ও ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঠিকমতো তিন বেলা খাবারও জোটে না। মাথা নিচু করে করতে হয় ঘরে প্রবেশ। ঘরে দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। বিবাহযোগ্য চার মেয়ে থাকলেও অভাবে কারণে তাদের বিয়ে হচ্ছে না। বলছিলাম নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চর লক্ষী গ্রামের মাইন উদ্দীন সেলিমের (৪৯) কথা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চর লক্ষী গ্রামের বাসু মেকানিকের বাড়িতে ভাঙা বেড়া, পাতা এবং পলিথিনে মোড়ানো ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস মাইন উদ্দীন সেমিল-আনোয়ারা বেগম দম্পতির। অভাবের পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টি আর শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছে তাদের জীবন। ঘর এতো নিচু যে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই সেখানে।

মাইন উদ্দীনের চাচাতো ভাই আলা উদ্দিন বলেন, ছয়টা মেয়ে আর একটা ছেলে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে আছে তারা। এই ঘরে থাকার মতো অবস্থা নাই। এমন ঘর আর বাংলাদেশের কোথাও আছে বলে আমার মনে হয় না। নিজের ওষুধ যে কিনবে সেই সামর্থ্য নেই তাদের। মেয়েদের বিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা। যদি সরকার বা কোনো অর্থশালী লোকজন এগিয়ে আসতো তাহলে মাইন উদ্দীনের উপকার হইতো। ঝড় বৃষ্টি হলে সে কীভাবে থাকবে আল্লাহই ভালো জানেন।

আজাদ উদ্দিন নামের আরেক ভাই বলেন, আমার ভাই অসুস্থ হয়ে করোনার সময় থেকে ঘরে বসে আছে। সে প্যারালাইজড রোগী, কিন্তু ওষুধ কিনতে পারতেছে না। আবার চাল ডাল ও কিনতে পারছে না। তার ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে খাওয়ার মতো তার সামর্থ্য নেই।

মাইন উদ্দীনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, স্বামীকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। কী খাই, কিভাবে দিন যায় বলতে পারি না। এক আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না আমাদের কষ্ট। আর কাউকে বোঝাতেও পারি না। মেয়েদেরকে বিয়ে দিতে পারি না। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে আমাদের রক্ষা হবে না হয় আমাদের মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কূল নাই।

গ্রাম্য ডাক্তার মো. নুর উদ্দিন বলেন, মাইন উদ্দীন সেলিম সাইকেল মেকানিক ছিল। সে দীর্ঘ চার বছর ধরে অসুস্থ। তার বাবাও প্যারালাইজড ছিলেন। কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। সেলিম মেকার দুই বার স্ট্রোক করেছেন। আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে তাকে ওষুধ দিচ্ছি। সে মাইজদী গিয়ে যে ডাক্তার দেখাবে তার সামর্থ্য নাই। আমি ওষুধের অনেক টাকা পাই। তারপরও আমি চাই সে সুস্থ হোক। তার নুন আনতে পান্তা ফুরায়।

মাইন উদ্দীন সেলিম বলেন, আমার মেয়েরা অন্যের সবজি তুলে যে টাকা পায় তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। ভাত খেলে ওষুধ খেতে পারি না, ওষুধ খেলে ভাত খেতে পারি না। কোনোদিন একবেলা খাই, বাকি দুইবেলা না খেয়ে থাকি। আমি যখন চোখ বন্ধ করি তখন চিন্তা করি যদি মারা যাই আমার মেয়ে-ছেলেগুলোর কী হবে। তারা কী করে বাঁচবে আর কী খাবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আল আমিন সরকার বলেন, আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম এ রকম একটি পরিবার খুব দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। তাদের ঘরের অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য হচ্ছে কোনো মানুষ গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না। সেই লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি খোঁজখবর নেব এবং সত্যিই উনি যদি খুবই মানবতার জীবনযাপন করেন তাহলে আমি একটা ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ বিষয়ে আমার শ্রদ্ধেয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলবো এবং আমার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তার পাশে থাকবো।

সর্বাধিক পঠিত

নোবিপ্রবি ছাত্রী হলে অগ্নিকাণ্ড, পরীক্ষা স্থগিত

ঝুপড়ি ঘরে ৯ সদস্যের বসবাস, বিয়ে হচ্ছে না মেয়েদের

আপডেট: ০৮:৫৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

স্টাফ রির্পোটার-
অর্থের অভাবে প্রায় চার বছর ধরে নিজের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ৬ মেয়ে, ১ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে জরাজীর্ণ ও ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঠিকমতো তিন বেলা খাবারও জোটে না। মাথা নিচু করে করতে হয় ঘরে প্রবেশ। ঘরে দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। বিবাহযোগ্য চার মেয়ে থাকলেও অভাবে কারণে তাদের বিয়ে হচ্ছে না। বলছিলাম নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চর লক্ষী গ্রামের মাইন উদ্দীন সেলিমের (৪৯) কথা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চর লক্ষী গ্রামের বাসু মেকানিকের বাড়িতে ভাঙা বেড়া, পাতা এবং পলিথিনে মোড়ানো ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস মাইন উদ্দীন সেমিল-আনোয়ারা বেগম দম্পতির। অভাবের পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টি আর শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছে তাদের জীবন। ঘর এতো নিচু যে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই সেখানে।

মাইন উদ্দীনের চাচাতো ভাই আলা উদ্দিন বলেন, ছয়টা মেয়ে আর একটা ছেলে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে আছে তারা। এই ঘরে থাকার মতো অবস্থা নাই। এমন ঘর আর বাংলাদেশের কোথাও আছে বলে আমার মনে হয় না। নিজের ওষুধ যে কিনবে সেই সামর্থ্য নেই তাদের। মেয়েদের বিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা। যদি সরকার বা কোনো অর্থশালী লোকজন এগিয়ে আসতো তাহলে মাইন উদ্দীনের উপকার হইতো। ঝড় বৃষ্টি হলে সে কীভাবে থাকবে আল্লাহই ভালো জানেন।

আজাদ উদ্দিন নামের আরেক ভাই বলেন, আমার ভাই অসুস্থ হয়ে করোনার সময় থেকে ঘরে বসে আছে। সে প্যারালাইজড রোগী, কিন্তু ওষুধ কিনতে পারতেছে না। আবার চাল ডাল ও কিনতে পারছে না। তার ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে খাওয়ার মতো তার সামর্থ্য নেই।

মাইন উদ্দীনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, স্বামীকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। কী খাই, কিভাবে দিন যায় বলতে পারি না। এক আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না আমাদের কষ্ট। আর কাউকে বোঝাতেও পারি না। মেয়েদেরকে বিয়ে দিতে পারি না। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে আমাদের রক্ষা হবে না হয় আমাদের মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কূল নাই।

গ্রাম্য ডাক্তার মো. নুর উদ্দিন বলেন, মাইন উদ্দীন সেলিম সাইকেল মেকানিক ছিল। সে দীর্ঘ চার বছর ধরে অসুস্থ। তার বাবাও প্যারালাইজড ছিলেন। কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। সেলিম মেকার দুই বার স্ট্রোক করেছেন। আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে তাকে ওষুধ দিচ্ছি। সে মাইজদী গিয়ে যে ডাক্তার দেখাবে তার সামর্থ্য নাই। আমি ওষুধের অনেক টাকা পাই। তারপরও আমি চাই সে সুস্থ হোক। তার নুন আনতে পান্তা ফুরায়।

মাইন উদ্দীন সেলিম বলেন, আমার মেয়েরা অন্যের সবজি তুলে যে টাকা পায় তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। ভাত খেলে ওষুধ খেতে পারি না, ওষুধ খেলে ভাত খেতে পারি না। কোনোদিন একবেলা খাই, বাকি দুইবেলা না খেয়ে থাকি। আমি যখন চোখ বন্ধ করি তখন চিন্তা করি যদি মারা যাই আমার মেয়ে-ছেলেগুলোর কী হবে। তারা কী করে বাঁচবে আর কী খাবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আল আমিন সরকার বলেন, আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম এ রকম একটি পরিবার খুব দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। তাদের ঘরের অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য হচ্ছে কোনো মানুষ গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না। সেই লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি খোঁজখবর নেব এবং সত্যিই উনি যদি খুবই মানবতার জীবনযাপন করেন তাহলে আমি একটা ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ বিষয়ে আমার শ্রদ্ধেয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলবো এবং আমার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তার পাশে থাকবো।