স্টাফ রিপোর্টার-
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপে ছোট্ট আম গাছে দুইটি বড় মৌচাক। চারিদিকে উড়ছে মৌমাছি। এ দৃশ্য দেখতে অনেকেই ভিড় জমান। নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুনের আম গাছের এই মৌচাক থেকে বছরে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন।
আবদুল্লাহ আল মামুন নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের আবদুল মান্নানের ছেলে। দীর্ঘ তিন বছর ধরে আম গাছের মৌচাক থেকে মধু আহরণ করেন তিনি।
জানা যায়, গরুর খামারের পাশে পুকুরপাড়ের একটি আমগাছে চার বছর আগে মৌমাছি মৌচাক তৈরি করে। নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান হওয়ায় এখানে ম্যানগ্রোভ বনের অংশ রয়েছে। বনের ফুল থেকে মধু আহরণ করে মৌমাছি এই মৌচাকে আসে। এক বছরে চারবার মৌচাক কাটা হয়। এভাবে অন্তত বছরে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন আবদুল্লাহ আল মামুন।
ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি চার বছর ধরে একটি খামার করি। সেই সময় থেকে আমগাছে একটা মৌচাক হয়। গত বছর ডাল কেটে দেওয়ার পর দুইটি মৌচাক হয়। নিঝুম দ্বীপের মধু সব থেকে খাঁটি। এখানে কেওড়া, বাইন ও গোয়া ফুলের ভিতর মধু হয়। প্রথম কাটায় অন্তত ২০ কেজির ওপরে মধু পাওয়া যায়। এতে করে চারবার কাটলে অন্তত ৬০ হাজার টাকার মধু পাওয়া যায়।
নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. কেফায়েত হোসেন বলেন, মৌমাছিরা সংঘবদ্ধভাবে এক জায়গায় থাকতে ভালোবাসে। এদের বিরক্ত না করলে বহু দিন পর্যন্ত এক জায়গায় অবস্থান করে। নিঝুম দ্বীপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরুপ স্থান। এখানে বিশাল ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ফলে মৌমাছিরা সহজেই মধু সংগ্রহ করতে পারে। আবদুল্লাহ আল মামুনের মৌচাক দেখতে পর্যটকরা ভিড় জমায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নোয়াখালীর উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শহীদুল হক বলেন, আমাদের দেশে মধু চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডাল-তেল জাতীয় ফসলের পাশাপাশি আমরা মধুর বক্স দিতে বলি। এতে পরাগায়ন বৃদ্ধি পায়। নিঝুম দ্বীপের ব্যবসায়ীর বাড়িতে মৌমাছিরা নিরাপদ মনে করায় চার বছর ধরে মৌচাক করে যাচ্ছে। এতে বছরে ৬০ হাজার টাকা লাভ করায় এটি শিল্পে রূপান্তরিত হয়েছে। এভাবে যদি মধুর চাষ বাড়ানো যায় তাহলে মধুর চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কৃষক লাভবান হবে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রেশন সাইন্সের চেয়ারম্যান সায়েদা সায়েমা আলম বলেন, মধুতে সরাসরি গ্লুকোজ থাকে না। মধুতে ফ্রুকটোজ থাকে। গ্লুকোজ যেমন সরাসরি রক্তে চলে আসে, মধু আবার গ্লুকোজে কনভার্ট হয়ে রক্তে আসে। মধু খেলে সরাসরি রক্তে সুগার আসে না। সুগার সরাসরি রক্তে মিশে যে ক্ষতি হয় মধুতে সে ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। চিনি সরাসরি যে ক্ষতি করে, মধুতে সেই ক্ষতি নেই। সুগার বেশি পরিমাণ খেলে শুধু ডায়াবেটিস হচ্ছে তা না। তার পাশাপাশি কার্ডিওভাসকুলার রোগের জন্য ক্ষতি করে। কার্ডিওভাসকুলার হার্ট বা রক্তনালীর ওপর সংক্রমণ করে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কৃষিবিদ ড. মেহেদী হাসান রুবেল বলেন, মধু দেহে তাপ ও শক্তি যোগায়। মধুতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়। কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে। এছাড়া মধু ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এক চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অম্লত্ব দূর হয়। মধু রক্তশূন্যতা, হাঁপানি ও ফুসফুসের যাবতীয় রোগ, অনিদ্রার, যৌন দুর্বলতায় প্রতিরোধে, তারুণ্য ধরে রাখতে, দাঁতের ক্ষয়রোধ ও মধু মুখের ঘায়ের জন্য উপকারী। বিশেষ করে রূপচর্চার ক্ষেত্রে মধু অনেক বেশি কার্যকর। মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির মধু ব্যবহৃত হয়।