আবুল বাশার (সূবর্ণচর প্রতিনিধি)-
নোয়াখালীর সূবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ছেলে সাবাব চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভোট করায় এবার ইউপি চেয়ারম্যানকে ডিও লেটার বন্ধের ভয় দেখিয়েছেন কবিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলি। তিনি নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর স্ত্রী।
রোববার (৫ মে) বিকেলে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের স্থানীয় সাত্তারমাঝির বাড়িতে উঠান বৈঠকে মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরীকে এ হুমকি দেন তিনি। এর একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
যাতে কামরুন নাহার শিউলিকে বলতে শোনা যায়, শুনেন, যে চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেতারে (তাকে) জিজ্ঞেস করিয়েন, বোলে তুই আগে কি একরাম চৌধুরীর বাড়িত যাই চেহারা এমনের তুন (মাথা নিচু করে) ওপরে তুলতি না, বলতি ভাবি আঁরে বাঁচান, ভাবি আঁরে বাঁচান। অনগা (এখন) হেই মহিউদ্দিন চৌধুরী জোট বাইনছে। বান্দক, আজ্জা জোট বান্দি যদি জনগণের উন্নয়ন কইত্তে পারো, করো। কাঁচা রাস্তা দি আঁড়ি আইছি। তোর ডিও লেটারে তো আর এ রাস্তার উন্নয়ন অইতো নয়। তুই কোদ্দুরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, তুই শুধু সিলিপ (স্লিপ) এক্কান দিতা হাইরবা, আর জনগণের চাইল ৩০ কেজির তুন হোনরো (১৫) কেজি কাড়ি রাইকতা হাইরবা। এসব ষড়যন্ত্র পাকানোকারীদের আপনারা চিহ্নিত করে রাখেন।
একই দিন সন্ধ্যায় ওই ইউনিয়নের ২ নাম্বার ওয়ার্ডে আরেক উঠান বৈঠকে এমপি পত্নী কামরুন নাহার শিউলি বলেন, আজকে একরাম চৌধুরীকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বাইর (বাহির) করে দিছেন (দিয়েছেন)। তখন সব কাজ আমরা করছি, তখন জেলা আওয়ামী লীগের অফিস ছিল ফাইভ স্টার হোটেল। এখন সেই জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়কে গোয়াল ঘর বানাইছে। আর গোয়াল ঘরে কিছু শূন্য-শামান্ত নিয়ে আসে, জায়গা জায়গা হুমকি-ধুমকি দেয়। নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহীদুল্যাহ খান সোহেলকে নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেন শিউলি।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম চৌধুরীর পক্ষে ভোট করছি। তবে কখনো অন্যায়-অপরাধ করিনি। কারো কাছে মাথা নতও করিনি। কিছু ব্যক্তি নির্বাচন এলে মাফ চাইবে, নির্বাচিত হলে নিজেকে প্রভু মনে করবে। ঘৃণাভরে তাদের প্রত্যাখ্যান করায় আবোল-তাবোল বকছে। তাদের পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের খোঁজখবর নিয়ে দেখেন। চোর ডাকাত টাউট বাটপার পাশে নিয়ে জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে।
এর আগে ছেলে সাবাব চৌধুরীকে ভোট না দিলে এলাকায় উন্নয়ন না করার হুমকি দেন এমপি একরামুল করিম চৌধুরী। এক বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, যে এলাকা থেকে ভোট কম দেবেন, সে এলাকায় কোনো উন্নয়নে হাত দেব না। সরাসরি কথা, গিভ অ্যান্ড টেক। আমাকে দেবেন, আমি আপনাদের দেব। আমারে এমপি বানাইছেন, আমি তো বলছি, পাঁচ বছর ক্ষমতায় আছি। এখন আমার মনমতো উপজেলা চেয়ারম্যান যদি বানান, আমার মিডলম্যান, আমি আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম।
এ উপজেলায় প্রথম ধাপে আগামী বুধবার (৮ মে) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও কবিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলির একমাত্র ছেলে আতাহার ইশরাক ওরফে সাবাব চৌধুরী (আনারস)। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের তিনবারের সভাপতি ও সূবর্ণচর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিম চৌধুরী (দোয়াত কলম)।