১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রেমের টানে বিয়ে অত:পর আত্মহত্যা, স্ট্রোক করে মারা গেলেন বাবাও

স্টাফ রিপোর্টার-
নোয়াখালী সদর উপজেলায় আত্মহত্যা করে মেয়ের ও স্ট্রোক করে বাবার মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুরের দিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে, গতকাল বুধবার (৫ জুন) সকাল সাড়ে ৮ থেকে ৯ টার মধ্যে নোয়াখালীর পৌরসভার ২ নাম্বার ওয়ার্ডের উকিল পাড়ার নরেশ চন্দ্র দে এর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতারা হলেন, নোয়াখালীর পৌরসভার ২ নাম্বার ওয়ার্ডের উকিল পাড়ার নরেশ চন্দ্র দে (৫০) ও তার মেয়ে তিশা দে (১৯)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত নরেশ চন্দ্রের মেয়ে তিশা ফেনীর একটি কলেজে পড়ত। পড়ালেখা অবস্থায় সেখানে একটি মুসলিম ছেলেকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করে৷ বিষয়টি তার বাবা জানতে পেরে তাকে ফেনী থেকে নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীর নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এ নিয়ে মেয়েকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেন বাবা। সে যেন তার স্বামীর সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে। কিন্তু মেয়ে তার স্বামীর পক্ষে অনড় ছিল। একপর্যায়ে বাবা ও মেয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা মনমালিন্যের সৃষ্টি হয়। পরে মেয়েটি তার কক্ষের দরজা বন্ধ করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে মেয়ের মৃত্যু দেখে বাবা ও স্ট্রোক করে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায় মৃত নরেশের বাড়িতে তেমন মানুষজন নাই।পরিবেশে চাপা শোকের স্তব্ধতা বিরাজ করছে। নোয়াখালী বার্তার টিমকে দেখে এগিয়ে আসেন কয়েকজন প্রতিবেশি।তারা বলেন নরেশ দা অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। তার মেয়েকে অনেক ভালোবাসতেন। এ ঘটনায় আমরা প্রতিবেশী হিসেবে অত্যন্ত মর্মাহত। সেখান থেকে নোয়াখালী বার্তার টিম রওনা হয় মহাশ্মশানের দিকে ( সেখানে নরেশ ও তার মেয়ে তিশার শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথা) সেখানে গিয়ে দেখা যায় শ্মশানের মধ্যেই একটি চৌকির উপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে মৃত নরেশের স্ত্রী বিউটি দে (৩৫) শোক সইতে না পেরে নরেশের অপর মেয়ে ঐশি দে ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা তাকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। মৃত নরেশের ক্লাস টেনে পড়ুয়া একমাত্র ছেলে অমিত দে শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

আত্মহত্যা করা তিশার মামি লিপি রায় কান্নাজড়িত কন্ঠে কালবেলাকে বলেন। নিজের সন্তানের মত করে ওদের আদর যত্ন করতাম। দুইটা মানুষ চলে গেলো আমরা শোকে নিস্তব্ধ বলার মত কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।

ময়নাতদন্ত সম্পন্নকারী ডাক্তার তানভীর হায়দার বলেন, নরেশ দে ও তিশা নামের দুইজন ব্যক্তির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এবং ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট র্কতৃপক্ষের কাছে ময়নাতদন্তের রির্পোট পৌঁছে দেওয়া হবে।

নোয়াখালী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোর্তাহিন বিল্লাহ বলেন বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে নোয়াখালী পৌরসভার ২নাম্বার ওয়ার্ডে নরেশ চন্দ্র দে ও তার মেয়ে তিশার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ ছুটে যায়। এবং সুরতহাল সম্পন্ন করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। আমরা তো মাত্র প্রথম পর্যায়ে, ময়নাতদন্তের রির্পোট হাতে পাওয়ার পর তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে।

সর্বাধিক পঠিত

নোবিপ্রবি ছাত্রী হলে অগ্নিকাণ্ড, পরীক্ষা স্থগিত

প্রেমের টানে বিয়ে অত:পর আত্মহত্যা, স্ট্রোক করে মারা গেলেন বাবাও

আপডেট: ১০:১১:২৮ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার-
নোয়াখালী সদর উপজেলায় আত্মহত্যা করে মেয়ের ও স্ট্রোক করে বাবার মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুরের দিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে, গতকাল বুধবার (৫ জুন) সকাল সাড়ে ৮ থেকে ৯ টার মধ্যে নোয়াখালীর পৌরসভার ২ নাম্বার ওয়ার্ডের উকিল পাড়ার নরেশ চন্দ্র দে এর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতারা হলেন, নোয়াখালীর পৌরসভার ২ নাম্বার ওয়ার্ডের উকিল পাড়ার নরেশ চন্দ্র দে (৫০) ও তার মেয়ে তিশা দে (১৯)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত নরেশ চন্দ্রের মেয়ে তিশা ফেনীর একটি কলেজে পড়ত। পড়ালেখা অবস্থায় সেখানে একটি মুসলিম ছেলেকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করে৷ বিষয়টি তার বাবা জানতে পেরে তাকে ফেনী থেকে নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীর নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এ নিয়ে মেয়েকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেন বাবা। সে যেন তার স্বামীর সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে। কিন্তু মেয়ে তার স্বামীর পক্ষে অনড় ছিল। একপর্যায়ে বাবা ও মেয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা মনমালিন্যের সৃষ্টি হয়। পরে মেয়েটি তার কক্ষের দরজা বন্ধ করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে মেয়ের মৃত্যু দেখে বাবা ও স্ট্রোক করে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায় মৃত নরেশের বাড়িতে তেমন মানুষজন নাই।পরিবেশে চাপা শোকের স্তব্ধতা বিরাজ করছে। নোয়াখালী বার্তার টিমকে দেখে এগিয়ে আসেন কয়েকজন প্রতিবেশি।তারা বলেন নরেশ দা অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। তার মেয়েকে অনেক ভালোবাসতেন। এ ঘটনায় আমরা প্রতিবেশী হিসেবে অত্যন্ত মর্মাহত। সেখান থেকে নোয়াখালী বার্তার টিম রওনা হয় মহাশ্মশানের দিকে ( সেখানে নরেশ ও তার মেয়ে তিশার শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথা) সেখানে গিয়ে দেখা যায় শ্মশানের মধ্যেই একটি চৌকির উপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে মৃত নরেশের স্ত্রী বিউটি দে (৩৫) শোক সইতে না পেরে নরেশের অপর মেয়ে ঐশি দে ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা তাকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। মৃত নরেশের ক্লাস টেনে পড়ুয়া একমাত্র ছেলে অমিত দে শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

আত্মহত্যা করা তিশার মামি লিপি রায় কান্নাজড়িত কন্ঠে কালবেলাকে বলেন। নিজের সন্তানের মত করে ওদের আদর যত্ন করতাম। দুইটা মানুষ চলে গেলো আমরা শোকে নিস্তব্ধ বলার মত কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।

ময়নাতদন্ত সম্পন্নকারী ডাক্তার তানভীর হায়দার বলেন, নরেশ দে ও তিশা নামের দুইজন ব্যক্তির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এবং ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট র্কতৃপক্ষের কাছে ময়নাতদন্তের রির্পোট পৌঁছে দেওয়া হবে।

নোয়াখালী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোর্তাহিন বিল্লাহ বলেন বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে নোয়াখালী পৌরসভার ২নাম্বার ওয়ার্ডে নরেশ চন্দ্র দে ও তার মেয়ে তিশার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ ছুটে যায়। এবং সুরতহাল সম্পন্ন করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। আমরা তো মাত্র প্রথম পর্যায়ে, ময়নাতদন্তের রির্পোট হাতে পাওয়ার পর তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে।