নুর হোসাইন :
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় এক নারীকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তোলা একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এবং মুহূর্তেই ভিডিও টি ভাইরাল হয়ে যায়। দেখা যায়, ফেসবুক সহ সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ এটিকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে উল্লেখ করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঘটনাটি সত্য। তবে সেটা সাম্প্রদায়িক হামলা বা সহিংসতার ঘটনা ছিল না। ওই নারীকে অপহরণের চেষ্টা করেছিলেন তাঁর স্বামী। তবে তিনি তা পারেননি। এমনটি জানিয়েছেন ওই নারীর বাবা এবং গ্রামবাসী। ওই নারীকে অপহরণের চেষ্টার ঘটনা ঘটে গতকাল বৃহস্পতিবার। ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, কয়েক জন ব্যক্তি জোর করে রাস্তায় থামানো একটি মাইক্রোবাসে নারীকে ওঠানোর চেষ্টা করছেন। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাম্পত্য বিরোধের জেরে স্বামীর ঘর থেকে বাবার বাড়িতে চলে এসেছিলেন ওই নারী। তাঁকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তাঁর স্বামীসহ কয়েকজন ব্যক্তি। তখন ওই নারীর চিৎকার শুনে গ্রামবাসী এগিয়ে আসেন। তাঁরা মাইক্রোবাসটি ভাঙচুর করেন। এ সময় ওই নারীর স্বামী প্রসনজিৎ সহ তিনজনকে তাঁরা আটক করেন। আটক ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানায় গ্রামবাসী। অপহরণের শিকার হওয়া সেই ভুক্তভোগী নারীর বাবা বলেন, তাঁর মেয়ের প্রায় চার বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর মেয়ের স্বামী তাঁর কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। তিনি ৩ লাখ টাকা যৌতুক দিলেও তাঁর মেয়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলতে থাকে। দুই বছর আগে ওই নারী স্বামীর ঘর থেকে চলে আসেন। এরপর এক সালিস বৈঠকে দুজনের বিবাহবিচ্ছেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বিচ্ছেদ কার্যকরের আগে ওই নারীকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধের কথা ছিল বলে জানান তাঁর বাবা। তিনি বলেন, টাকা পরিশোধে অস্বীকৃতি জানানোর পর তাঁর মেয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। নারীর বাবা আরও বলেন, মামলায় হাজিরা দিতে এসে দেড় মাস আগেও একবার স্বামীসহ কয়েকজন আদালত চত্বর থেকে তাঁর মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা করেছিলেন। তখন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে তাঁর মেয়ের রক্ষা হয়। সর্বশেষ গতকালও দুটি মাইক্রোবাসে করে ১৭-১৮ জনের একটি দল তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা করেন। স্থানীস ইউনিয়নের পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গণমাধ্যমকে বলেন, এটি একটি দাম্পত্য কলহকে ঘিরে সংঘটিত ঘটনা। এলাকার সব ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে অপহরণের চেষ্টাকারীদের প্রতিহত করেছেন। এ সময় তিনজনকে আটক করা সম্ভব হলেও বাকিরা পালিয়ে গেছেন। সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। তাঁরা (পুলিশ সদস্য) দায়িত্ব পালনে বিরত থাকার কারণে সেখানে কেউ যাননি। শুনেছি আটক ব্যক্তিরা সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছে। তারা সেনবাগের ডুমুরিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।