১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জিম্মিদশা থেকে মুক্তি ছেলের জন্য পছন্দের খাবার রান্না করে অপেক্ষায় মা দৌলত আরা

স্টাফ রিপোর্টার-
জিম্মিদশা থেকে মুক্তির একমাস পর বাড়িতে আসবেন জাহাজের এবি (অ্যাবল সি ম্যান) হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ আনারুল হক রাজু। (২৯)। মা দৌলত আরা বেগম অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। ছেলের জন্য গরুর গোশত, মুরগির গোশত, মাছ ও খাইসসারা (সিমের বীচির বিশেষ তরকারি) রেঁধেছেন। গরমে নষ্ট হতে পারে তাই ছেলে আসলে রাঁধবেন পোলাও। যেন আনন্দের শেষ নাই। ছেলে আসলে নিজ হাতে খাওয়াবেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে দৌলত আরা বেগম বলেন। বাপজানের সঙ্গে দেখা হবে এতে আমরা সবাই আনন্দিত। আমি গরুর গোশত, মুরগির গোশত, মাছ ও খাইসসারা (সিমের বীচির বিশেষ তরকারি) ও ডাল রান্না করেছি। রাতে পোলাও রান্না করব। গরম আগে রান্না করলে পোলাও নষ্ট হয়ে যাবে। ছেলে আমার বুকে আসবে এটাই আমাদের আনন্দ।
মোহাম্মদ আনারুল হক রাজু নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের (আজিজুল হক মাস্টারের বাড়ি) আজিজুল হক মাস্টার ও দৌলত আরা বেগমের ছেলে। তিনি অবিবাহিত। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাজু তৃতীয়।
রাজু বামনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর বামনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। চট্টগ্রামের ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (এনএমআই) থেকে সিডিসি কোর্স সম্পন্ন করেন।
জানা যায়, জিম্মি দশা থেকে মুক্তির একমাস পর স্বজনদের কাছে ফিরেছেন এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক। জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া এই ২৩ নাবিককে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে এসে পৌঁছেছে এমভি জাহান মনি-৩।
আজ (মঙ্গলবার) বিকেল ৪টার দিকে জাহাজটি জেটিতে পৌঁছায়। এক মাস আগে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে (জিম্মিদশা) মুক্ত হওয়া এমভি আব্দুল্লাহ বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায়। কিন্তু দেশে ফিরলেও স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাদের আরও একদিন অপেক্ষা করতে হয়।
রাজুর বাবা আজিজুল হক মাস্টার বলেন, রাজু বাড়িতে এসে ঈদ করার কথা ছিল। ঈদের সময় আমরা ঈদ করতে পারিনি। আজ আমাদের ঈদ। নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে সহিসালামতে বাড়িতে আনেন।
রাজুর মা দৌলত আরা বেগম বলেন, ছেলেকে ছাড়া আমরা খুবই কষ্টে দিন অতিবাহিত করেছি। ছেলে নতুন পাকা ঘর করছে। এবার বাড়িতে আসলে ছেলেকে বিয়ে করাব। আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।
রাজুর বড় ভাই জিয়াউল হক রনি বলেন, আব্বা আম্মার বয়স হয়েছে। আমাদের বাড়ি থেকে কেউ চট্রগ্রাম যায়নি। চট্টগ্রামে থাকা আমাদের আত্মীয় স্বজনরা দেখা করতে গেছে। আমার ভাই আসবে বাড়িতে এটাই আমাদের আনন্দ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী বলেন, সন্তানের জন্য বাবা মায়ের অস্থিরতা কেউ বুঝবে না যতক্ষণ না কেউ নিজে বাবা-মা হবে। রাজুর পরিবারের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। রাজুর ঘরে আজ আনন্দ বইছে। ভালো রান্না-বান্না হচ্ছে। অতীতের ন্যায় সব সময় যেকোনো প্রয়োজনে রাজুর পরিবারের পাশে উপজেলা প্রশাসন ছিল, আছে এবং থাকবে।

সর্বাধিক পঠিত

নোবিপ্রবি ছাত্রী হলে অগ্নিকাণ্ড, পরীক্ষা স্থগিত

জিম্মিদশা থেকে মুক্তি ছেলের জন্য পছন্দের খাবার রান্না করে অপেক্ষায় মা দৌলত আরা

আপডেট: ০৩:১৯:০১ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার-
জিম্মিদশা থেকে মুক্তির একমাস পর বাড়িতে আসবেন জাহাজের এবি (অ্যাবল সি ম্যান) হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ আনারুল হক রাজু। (২৯)। মা দৌলত আরা বেগম অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। ছেলের জন্য গরুর গোশত, মুরগির গোশত, মাছ ও খাইসসারা (সিমের বীচির বিশেষ তরকারি) রেঁধেছেন। গরমে নষ্ট হতে পারে তাই ছেলে আসলে রাঁধবেন পোলাও। যেন আনন্দের শেষ নাই। ছেলে আসলে নিজ হাতে খাওয়াবেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে দৌলত আরা বেগম বলেন। বাপজানের সঙ্গে দেখা হবে এতে আমরা সবাই আনন্দিত। আমি গরুর গোশত, মুরগির গোশত, মাছ ও খাইসসারা (সিমের বীচির বিশেষ তরকারি) ও ডাল রান্না করেছি। রাতে পোলাও রান্না করব। গরম আগে রান্না করলে পোলাও নষ্ট হয়ে যাবে। ছেলে আমার বুকে আসবে এটাই আমাদের আনন্দ।
মোহাম্মদ আনারুল হক রাজু নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের (আজিজুল হক মাস্টারের বাড়ি) আজিজুল হক মাস্টার ও দৌলত আরা বেগমের ছেলে। তিনি অবিবাহিত। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাজু তৃতীয়।
রাজু বামনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর বামনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। চট্টগ্রামের ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (এনএমআই) থেকে সিডিসি কোর্স সম্পন্ন করেন।
জানা যায়, জিম্মি দশা থেকে মুক্তির একমাস পর স্বজনদের কাছে ফিরেছেন এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক। জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া এই ২৩ নাবিককে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে এসে পৌঁছেছে এমভি জাহান মনি-৩।
আজ (মঙ্গলবার) বিকেল ৪টার দিকে জাহাজটি জেটিতে পৌঁছায়। এক মাস আগে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে (জিম্মিদশা) মুক্ত হওয়া এমভি আব্দুল্লাহ বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায়। কিন্তু দেশে ফিরলেও স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাদের আরও একদিন অপেক্ষা করতে হয়।
রাজুর বাবা আজিজুল হক মাস্টার বলেন, রাজু বাড়িতে এসে ঈদ করার কথা ছিল। ঈদের সময় আমরা ঈদ করতে পারিনি। আজ আমাদের ঈদ। নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে সহিসালামতে বাড়িতে আনেন।
রাজুর মা দৌলত আরা বেগম বলেন, ছেলেকে ছাড়া আমরা খুবই কষ্টে দিন অতিবাহিত করেছি। ছেলে নতুন পাকা ঘর করছে। এবার বাড়িতে আসলে ছেলেকে বিয়ে করাব। আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।
রাজুর বড় ভাই জিয়াউল হক রনি বলেন, আব্বা আম্মার বয়স হয়েছে। আমাদের বাড়ি থেকে কেউ চট্রগ্রাম যায়নি। চট্টগ্রামে থাকা আমাদের আত্মীয় স্বজনরা দেখা করতে গেছে। আমার ভাই আসবে বাড়িতে এটাই আমাদের আনন্দ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী বলেন, সন্তানের জন্য বাবা মায়ের অস্থিরতা কেউ বুঝবে না যতক্ষণ না কেউ নিজে বাবা-মা হবে। রাজুর পরিবারের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। রাজুর ঘরে আজ আনন্দ বইছে। ভালো রান্না-বান্না হচ্ছে। অতীতের ন্যায় সব সময় যেকোনো প্রয়োজনে রাজুর পরিবারের পাশে উপজেলা প্রশাসন ছিল, আছে এবং থাকবে।