১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টানা ৩ দিন চোখ, হাত ও পা বাঁধা ছিলো, ইউনুস স্যারের কারণে আমরা মুক্তি পেয়েছি

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট: ১১:৪৫:০৯ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৮৭২

নুর হোসেন: ফেসবুকে যখন দেখলাম আমার বাংলাদেশে ছাত্রদের  ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। আমি বসে থাকতে পারি নাই। আমি আন্দোলনে শরিক হয়ে মিছিলে গেছিলাম। তারপর দুবাইয়ের পুলিশ আমাদের জেলখানায় নিয়ে যায়। টানা ৩ দিন চোখ, হাত ও পা বাঁধা ছিল। কোনো আলো দেখতে পাইনি। ইউনুস স্যারের কারণে আমরা মুক্তি পেয়েছি৷ ভিসা করেছি মাত্র দুই মাস হয়েছে। এখনো অনেক টাকা ঋণের মধ্যে আছি। এভাবেই কারাগারের দুঃসহ স্মৃতির বর্ননা দিচ্ছিলেন আরব আমিরাতের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে আসা  নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বামনি গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে সাইফুদ্দিন জনি৷

কেবল জনির নয়, কারাগারের দুঃসহ স্মৃতি রয়েছে বেগমগঞ্জ উপজেলার মীরওয়ারিশপুর ২ নং ওয়ার্ডের বোলা বাদশা বানিয়া বাড়ির আবদুল হকের ছেলে নাসের আবদুল হক , সুবর্ণচর উপজেলায় চর জব্বর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের জাহাজমারা গ্রামের মো. বাবুলের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর ও সেনবাগ উপজেলার বীজবাগ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সিরাজ ড্রাইভারের বাড়ির আব্দুল মান্নের ছেলে আব্দুর রহমানের।

নাসের আবদুল হক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিনি আটক হয়েছিলেন। টানা ছয় দিন কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে রেখেছিল। কোথায় আছি তার খবর জানি না। কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। ভেতরে যা দিত তাই খেতে হতো। দীর্ঘ ৪৬ দিন জেলখানায় ছিলাম। ড. ইউনূস স্যারের কারণে আমরা মুক্ত হয়ে দেশে আসতে পেরেছি। তিনি ক্ষমতায় না এলে কারাগারের অন্ধকারেই আমাদের জীবন শেষ হতো।’

নাসের আরও বলেন, কারাগারে মনে হতো এই বুঝি জীবন শেষ হয়ে যায়। বাড়িতে স্ত্রী সন্তানেরা জানে না আমি কোথায় আছি। কোনো তথ্য বাড়িতে দিতে পারি নাই। আমার ব্যবসা বাণিজ্য সব সেদেশে রয়ে গেছে। এক কাপড়ে দেশে এসেছি। যদি আবার সেদেশে যেতে পারি তাহলে আমাদের উপকার হবে। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যারের সঙ্গে দেখা করতে চাই

তিনি বলেন, মিডিয়া জানে আমরা ৫৭ জন জেলে গেছি। আসলে ৫৭ জন নয়। মোট ১১৪ জন ছিলাম কারাগারে। ৫৭ জন করে দুইটা গ্রুপকে সেদিন আটক করা হয়েছে। যারা নিজের টাকায় টিকিট কেটেছে তারা আগে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছি। আর যারা সরকারিভাবে এসেছে তাদের দেশে আসতে সময় লাগছে। আমরা জানামতে ১০/১১ জন ছাড়া বাকি সবাই দেশে ফিরে এসেছে।

সুবর্ণচর উপজেলার মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ৫৭ জনের প্রথম গ্রুপে আমি ছিলাম। আমাদের আগে কারাগারে রাখা হয়। কারাগার জীবনের সে এক বিভীষিকাময় স্মৃতি। মনে পড়লে এখনো আতকে উঠি। সেদেশে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। আমরা সেখানে ভালো ছিলাম। আমাদের যেকোনো শর্তে সেদেশে নিলে আমরা রাজি আছি। নাহয় আমাদের পথে বসে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।

সেনবাগের আব্দুর রহমান  বলেন, প্রায় ৪ বছর ধরে আইনকানুন মেনে বেশ সুনামের সঙ্গে দুবাইতে ব্যবসা করে আসছি। আমার বাবা নাই। চার বোন আর মাকে নিয়ে আমাদের সংসার। দেশে চলে আসায় পুরো পরিবার নিয়ে বিপাকে আছি। ড. ইউনুস স্যার যদি আমাদের কোনো ব্যবস্থা করে তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে। আমরা স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই।

প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ যখন বিক্ষোভে উত্তাল, সে সময় তাতে সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছিলেন বাংলাদেশিরা। ২০ জুলাই সন্ধ্যায় দুবাই, শারজাহ ও আজমানের বিভিন্ন এলাকার সড়কে বিক্ষোভের সময় ৫৭ বাংলাদেশিকে আটক করে আমিরাতের পুলিশ।

দুই দিন পর দাঙ্গা, যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং সম্পদহানীর মত অভিযোগে তাদের তিনজনকে যাবজ্জীবন, একজনকে ১১ বছর এবং বাকি ৫৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয় স্থানীয় আদালত। এরপর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সুবিধা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার ঘোষণা দেয় আমিরাত সরকার।

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে স্বৈরাচারী হাসিনার সরকারের পতনপর পর ক্ষমা পান সেই ৫৭ বাংলাদেশি। প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে এই কারাবন্দী  প্রবাসীদের ক্ষমা করে দেন আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।

সর্বাধিক পঠিত

নোবিপ্রবি ছাত্রী হলে অগ্নিকাণ্ড, পরীক্ষা স্থগিত

টানা ৩ দিন চোখ, হাত ও পা বাঁধা ছিলো, ইউনুস স্যারের কারণে আমরা মুক্তি পেয়েছি

আপডেট: ১১:৪৫:০৯ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নুর হোসেন: ফেসবুকে যখন দেখলাম আমার বাংলাদেশে ছাত্রদের  ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। আমি বসে থাকতে পারি নাই। আমি আন্দোলনে শরিক হয়ে মিছিলে গেছিলাম। তারপর দুবাইয়ের পুলিশ আমাদের জেলখানায় নিয়ে যায়। টানা ৩ দিন চোখ, হাত ও পা বাঁধা ছিল। কোনো আলো দেখতে পাইনি। ইউনুস স্যারের কারণে আমরা মুক্তি পেয়েছি৷ ভিসা করেছি মাত্র দুই মাস হয়েছে। এখনো অনেক টাকা ঋণের মধ্যে আছি। এভাবেই কারাগারের দুঃসহ স্মৃতির বর্ননা দিচ্ছিলেন আরব আমিরাতের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে আসা  নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বামনি গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে সাইফুদ্দিন জনি৷

কেবল জনির নয়, কারাগারের দুঃসহ স্মৃতি রয়েছে বেগমগঞ্জ উপজেলার মীরওয়ারিশপুর ২ নং ওয়ার্ডের বোলা বাদশা বানিয়া বাড়ির আবদুল হকের ছেলে নাসের আবদুল হক , সুবর্ণচর উপজেলায় চর জব্বর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের জাহাজমারা গ্রামের মো. বাবুলের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর ও সেনবাগ উপজেলার বীজবাগ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সিরাজ ড্রাইভারের বাড়ির আব্দুল মান্নের ছেলে আব্দুর রহমানের।

নাসের আবদুল হক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিনি আটক হয়েছিলেন। টানা ছয় দিন কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে রেখেছিল। কোথায় আছি তার খবর জানি না। কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। ভেতরে যা দিত তাই খেতে হতো। দীর্ঘ ৪৬ দিন জেলখানায় ছিলাম। ড. ইউনূস স্যারের কারণে আমরা মুক্ত হয়ে দেশে আসতে পেরেছি। তিনি ক্ষমতায় না এলে কারাগারের অন্ধকারেই আমাদের জীবন শেষ হতো।’

নাসের আরও বলেন, কারাগারে মনে হতো এই বুঝি জীবন শেষ হয়ে যায়। বাড়িতে স্ত্রী সন্তানেরা জানে না আমি কোথায় আছি। কোনো তথ্য বাড়িতে দিতে পারি নাই। আমার ব্যবসা বাণিজ্য সব সেদেশে রয়ে গেছে। এক কাপড়ে দেশে এসেছি। যদি আবার সেদেশে যেতে পারি তাহলে আমাদের উপকার হবে। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যারের সঙ্গে দেখা করতে চাই

তিনি বলেন, মিডিয়া জানে আমরা ৫৭ জন জেলে গেছি। আসলে ৫৭ জন নয়। মোট ১১৪ জন ছিলাম কারাগারে। ৫৭ জন করে দুইটা গ্রুপকে সেদিন আটক করা হয়েছে। যারা নিজের টাকায় টিকিট কেটেছে তারা আগে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছি। আর যারা সরকারিভাবে এসেছে তাদের দেশে আসতে সময় লাগছে। আমরা জানামতে ১০/১১ জন ছাড়া বাকি সবাই দেশে ফিরে এসেছে।

সুবর্ণচর উপজেলার মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ৫৭ জনের প্রথম গ্রুপে আমি ছিলাম। আমাদের আগে কারাগারে রাখা হয়। কারাগার জীবনের সে এক বিভীষিকাময় স্মৃতি। মনে পড়লে এখনো আতকে উঠি। সেদেশে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। আমরা সেখানে ভালো ছিলাম। আমাদের যেকোনো শর্তে সেদেশে নিলে আমরা রাজি আছি। নাহয় আমাদের পথে বসে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।

সেনবাগের আব্দুর রহমান  বলেন, প্রায় ৪ বছর ধরে আইনকানুন মেনে বেশ সুনামের সঙ্গে দুবাইতে ব্যবসা করে আসছি। আমার বাবা নাই। চার বোন আর মাকে নিয়ে আমাদের সংসার। দেশে চলে আসায় পুরো পরিবার নিয়ে বিপাকে আছি। ড. ইউনুস স্যার যদি আমাদের কোনো ব্যবস্থা করে তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে। আমরা স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই।

প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ যখন বিক্ষোভে উত্তাল, সে সময় তাতে সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছিলেন বাংলাদেশিরা। ২০ জুলাই সন্ধ্যায় দুবাই, শারজাহ ও আজমানের বিভিন্ন এলাকার সড়কে বিক্ষোভের সময় ৫৭ বাংলাদেশিকে আটক করে আমিরাতের পুলিশ।

দুই দিন পর দাঙ্গা, যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং সম্পদহানীর মত অভিযোগে তাদের তিনজনকে যাবজ্জীবন, একজনকে ১১ বছর এবং বাকি ৫৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয় স্থানীয় আদালত। এরপর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সুবিধা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার ঘোষণা দেয় আমিরাত সরকার।

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে স্বৈরাচারী হাসিনার সরকারের পতনপর পর ক্ষমা পান সেই ৫৭ বাংলাদেশি। প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে এই কারাবন্দী  প্রবাসীদের ক্ষমা করে দেন আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।