নুর হোসাইন
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরজব্বার ইউনিয়নে ছেলের (২০) বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অপবাদ এনে গ্রাম্য সালিসে মাকে (৪০) প্রকাশ্যে লাঠিপেটার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি প্রায় এক বছর আগের হলেও শনিবার (২৬ অক্টোবর) থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
লাঠিপেটা করা জনপ্রতিনিধির নাম আইয়ুব আলী মেম্বার। তিনি সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি ঔ ওয়ার্ডের মেম্বার।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, আশপাশে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় মানুষ জড়ো হয়ে আছেন। মাঝখানে ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছেলের অপরাধে মায়ের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়। অভিযোগ অস্বীকার করলে একপর্যায়ে উপর্যুপরি লাঠিপেটা করতে থাকেন ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী। এ সময় পাশের কেউ কেউ ছেলের অপরাধের জন্য মাকে না মারার অনুরোধ করলেও কথা শুনেননি ইউপি সদস্য। আবার একই ভিডিওতে তার দেবর মোহাম্মদ মহসিন মাঝিকে (৪২) গালমন্দ করে তাকে মারার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে দেখা যায়।
স্থানীয় কয়েকটি বাড়িতে চুরির অভিযোগে প্রায় এক বছর আগে এই সালিস ডাকা হয়। ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘আমার ছেলের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করা হয়। তারপর আমাকে দোষী করা হয়। মেম্বার আইয়ুব আলী সবার সামনে আমাকে লাঠিপেটা করেন। আমি তখন অপরাধীর মা তাই কারও কাছে ন্যায়বিচার পাইনি। ঘটনাটি আমি কাউকে জানাতে পারিনি কারণ আইয়ুব আলী মেম্বার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য।’ ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বলেন, ‘আমার ঘরবাড়ি লুট করা হয়েছে। আমাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটা অনেক আগের। তবে আমরা মুখ খুলতে পারতাম না। আমাদের অনেক শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আমি এদের শাস্তির দাবি করছি।’
এলাকার লোকজনের সাথে আলাপ করে আরো জানা যায়, আইয়ুব আলী মেম্বার সবসময় নোয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের ছত্রছায়ায় ভোট চুরির মাধ্যমে স্বঘোষিত মেম্বার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এবং এলাকার লোকজনের জন্য সরকারের বরাদ্ধের যাবতীয় সামগ্রী ও আর্থিক অনুদান আত্মসাত করলেও বিএনপি জামাত ট্যাগ লাগিয়ে নিয্যাতনের ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় নাই। তারা আরো বলেন, ভুক্তভোগীরা নিতান্তই দরিদ্র ও অসহায়। তাই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্বেও মামলা খরচের অভাবে এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় আইয়ুব আলী মেম্বার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে পারে নাই। এব্যাপারে বর্তমান সরকার, আইনজীবি সমিতি ও দুস্থ মানবতার সহায়তায় আইনী সাহায্যকারী সংস্থা (ব্ল্যাষ্ট) ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এগিয়ে আসা দরকার।
এদিকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও ভিডিও পুরোনো বলে জানান ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, চুরির অপবাদ ছিল সত্য তবে আমি তাঁদের আত্মীয় হই। সে জন্য শাসন করছি। আর ভিডিওটি এক বছর আগের। আমি দুইবারের ইউপি সদস্য। আওয়ামী লীগের সমর্থক। পুরোনো ভিডিও দিয়ে বর্তমান সময়ে বিএনপির লোকেরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’
এ বিষয়ে চরজব্বর থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন মিয়া বলেন, বিষয়টি শুনেছি অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।